‘আওয়ামী লীগ কখনো জনগণের সঙ্গে বেঈমানি করেনি’
১৭ মে ২০২৩ ১৯:৩০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, যারা বাংলাদেশ চায়নি এবং এখনো চায় না তারা বাংলাদেশকে ধাক্কা দিয়ে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে চায়। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এরা শুধু মিথ্যাচারই নয়, নানাভাবে ও নানা কৌশলে ষড়যন্ত্রের জাল বুনে এদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখছে।
বুধবার (১৭ মে) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪২তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে নগর আওয়ামী লীগের উদ্যেগে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগকে নানাভাবে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সময়ে দেশ ও জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল। ইতিহাসের উল্টোযাত্রায় বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছিল পাকিস্তানি ভাবধারায়। সেসময় আওয়ামী লীগকে নানাভাবে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয়, পুনর্বাসিত করে এদেশে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় আচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছিল।’
‘এদেশে সবধরনের অপকর্ম দুর্নীতি, লুটপাট চলছিল অবাধে। রাজনীতি ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে ব্যাভচারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য শেখ হাসিনা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কারণ সেদিন দিশেহারা আওয়ামী লীগের জন্য হাল ধরার একমাত্র বিশস্ত ও আস্থাভাজনের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ কোথায় ছিল, আর এখন কোথায় আছে? একবার ভেবে দেখলে অবশ্যই অকপটে স্বীকার করতে হবে একমাত্র শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি ও হিম্মত। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী শক্তি কখনো পরাভব মানে না। আওয়ামী লীগও পরাভব মানে না। আমাদের শক্তির উৎস জনগণ। জনগণ যখন আওয়ামী লীগকে রায় দিয়েছে, তখন আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে বেঈমানি করেনি এবং তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে সাবেক এই সিটি মেয়র বলেন, ‘আওয়ামী শাসনামলে যেই উন্নয়ন ও সফলতা অর্জিত হয়েছে তা নজিরবিহীন। আজ সারা বিশ্ব বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বিস্মিত। একটি দরিদ্র দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। ভিখিরির হাত কর্মীর হাতে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর সারা বিশ্বকে বাংলাদেশকে নতুনভাবে চিনিয়েছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রসংশায় পঞ্চমুখ। তারাও জোর দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের স্বার্থে ও জনগণের সার্বিক কল্যাণে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি দলকে ভালোবাসি, দেশকে ভালোবাসি তাহলে জনগণের সাথে মিলে মিশে থাকতে হবে। তাদের সুখে দুঃখের সাথী হতে হবে। বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ বাঁচবে, আওয়ামী লীগ বাঁচবে এবং এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। আমরা একদিন উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক মন্তব্য করে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘আজকের এই দিনে ১৯৮১ সালে বিদেশে ছয় বছর নির্বাসন শেষে শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছেন বলেই আজ বাংলাদেশ রাহু মুক্ত হতে পেরেছে। সেদিন স্বৈরাশাসক জিয়াউর রহমান চাননি শেখ হাসিনা দেশে ফিরুক। বৃষ্টিস্নাত কুমির্টোলা বিমানবন্দরে সেদিন ১২ লাখ মানুষ শেখ হাসিনাকে বরণ করে নিয়েছিল। মা-বাবা, ভাই, আত্মীয়স্বজন ছাড়া শেখ হাসিনা বেদনা বিষাদ ভুলে শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশ ও জাতির হাল ধরেছিলেন।’
‘তিনি আজ শুধু একটি দেশের কর্ণধার নয়, বিশ্বের একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। তাই তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’
নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, এম জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, উপদেষ্টা শেখ মো. ইছহাক, সাংগঠনিক সম্পাদক সাংসদ নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, দফতর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু তাহের ও সদস্য পেয়ার মোহাম্মদ।
এর আগে, সভার শুরুতে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সদ্য প্রয়াত অমল মিত্রর প্রয়াণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম