Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইলিশ শিকারে ভারত-বাংলাদেশকে একসঙ্গে অবরোধ দিতে হবে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ মে ২০২৩ ২০:১৩

ঢাকা: ইলিশ রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দুই দেশে একসঙ্গে অবরোধের সময় নির্ধারণ করতে হবে। এর জন্য আন্তঃদেশীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন আইনপ্রণেতাসহ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, দুই দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের সীমান্তে এসে ইলিশ শিকার করে নিয়ে যায়। এতে ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আবার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা ও শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে পড়ার কারণে নদী দূষণের ফলে ইলিশের স্বাভাবিত বিচরণ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আবার জলদস্যুসহ নানা হয়রানির কারণেও জেলেরা মৎস্য আহরণের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আয়োজিত ‘উপকূলের ইলিশ ও জেলে’ বিষয়ক জাতীয় সংলাপে তারা এসব কথা বলেন।

বাপার সভাপতি সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপ সঞ্চালনা করেন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল। আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা ও আক্তারুজ্জামান বাবু, মৎস্য অধিদফতরের উপপ্রধান মাসুদ আরা মমি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল ওহাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা অধ্যাপক গুলশান আরা লতিফা, মৎস্য গবেষক ড. সৈয়দ আলী আজহার, খুলনার পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মন্টু, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, বাপা মোংলার আহবায়ক মো. নুর আলম শেখসহ জেলে, আড়ৎদার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকুয়ালচার বিভগের চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী।

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আ‘মরা ইতিবাচক কথা কেন বলতে পারছি না? সরকারিভাবে ইলিশ নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে, এর সুফল কেন পাচ্ছি না? জেলেরা কেন নেতিবাচক কথা বলছেন? আমরা যারা ভোক্তা আগে প্রতিদিন ইলিশ খেতাম এখন কেন খেতে পারছি না। এটা সরকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের বুঝতে হবে। এখানে জেলেরা তাদের সমস্যা ও সংকটের কথা তুলে ধরেছেন।’

তিনি বলেন, ‘সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে, কিন্তু একজন জেলের সংসার কি অনুদানের ৪০ কেজি চালে একমাস চলে? তাদের ভাতার যে কার্ড দেওয়া হয়, সেখানেও অনিয়ম এবং অপ্রতুলতার কারণে অধিকাংশ জেলেই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারের উচিত অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি জনসাধারণের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং বিকাশে আরও যত্নবান হওয়া।’

বিজ্ঞাপন

সংসদ সদস্য এস এম শাহাজাদা বলেন, ‘ইলিশ মাছ এখন ক্যালেন্ডারের পাতায় স্থান পেয়েছে। ইলিশ দিয়ে এখন কূটনীতিক সম্পর্ক হয়। এক দেশে থেকে আরেক দেশে রফতানি হচ্ছে। ইলিশের উৎপাদন কমেনি, বরং বেড়েছে। তবে তাদের আশ্রয়স্থল পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় আমরা গবেষণা বাড়াতে পারিনি। সমুদ্রের সীমানা বাড়লেও আমরা গবেষণার সামগ্রিক সুফল নিতে পারছি না। ইলিশের উৎপাদন বাড়লে সরকারের লাভ, কমলে এর জন্য দায়ী আমরা সবাই।’ আগামীতে ইলিশের উৎপাদন বাড়তে পারলে তা জিডিপিতে পদ্মা সেতুর চেয়েও বেশি অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মূল প্রবন্ধে মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জিডিপিতে ইলিশের একক অবদান ১২ শতাংশ এবং বিশ্বের ৮০ ভাগ ইলিশের যোগান আসে বাংলাদেশ থেকে। ইলিশের সুষ্ঠু পরিবেশে ও জেলেদের জীবনযাত্রা উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে একসঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ইলিশ ধরায় অবরোধের সময়কাল আঞ্চলিকভাবে একসাথে নির্ধারণ করতে হবে। জেলেদের ভরণপোষণের জন্য তহবিল গঠন করতে হবে। অবৈধ স্থাপনা বন্ধ করতে হবে।’

বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘২০১০ সালে পশুর নদীর এক লিটার পানিতে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার মাছের ডিম পাওয়া যেত। কিন্তু ২০১৭ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি লিটারে দুই হাজার ছয়শ’তে নেমে এসেছে। সরকারি সমীক্ষায় ইলিশের উৎপাদন বাড়লে সাধারণ মানুষ কেন তা পাচ্ছে না তা অনুসন্ধান করে বের করতে হবে।’

মৎস্য অধিদফতরের উপপ্রধান মাসুদ আরা মমি বলেন, ‘৮০ দশকে ইলিশ মাছের উৎপাদন পরিমাণ ছিল মোট ২০ শতাংশ। ২০০২-০৩ এই উৎপাদন কমে তা হয় ৮ শতাংশে। বর্তমান সরকারের আমলে নানা প্রকল্পে গ্রহণের ফলে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়ছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী ১০ কেজি চালের পরিবর্তে জেলেদের সহায়তা এখন ৪০ কেজি করেছে। তবে ইলিশের সঙ্গে জেলের সংখ্যাও বেড়েছে। কারেন্ট জাল, বেহুদি জাল, মশারি জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরা বন্ধ করতে পারলে উৎপাদন আরও বাড়বে।’

অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল ওহাব বলেন, ‘পরিবেশ, নদী ও সমুদ্র আজকে গরীর জেলেদের বিপক্ষে। ইলিশবান্ধব দেশ গড়তে হলে জেলেদের রক্ষায় মাসিক বেতন নির্ধারণ করতে হবে। প্রত্যেক জেলের কাছে থেকে সরকারিভাবে মাছ সংরক্ষণ করে কল্যাণ তহবিল গঠন করতে হবে। রাজনৈতিক দলাদলি বন্ধ করে সব জেলেদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়তে তুলতে হবে।’

অধ্যাপক গুলশান আরা লতিফা বলেন, ‘সরকারের উচিৎ ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোকে রক্ষায় উন্নয়ন প্রকল্পের পূর্ববর্তী গবেষণার স্বচ্ছতা ও ইলিশ রক্ষায় প্রণীত বিধি-বিধানগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। সেইসঙ্গে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

গবেষণক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আলী আজহার বলেন, ‘জেলেদের পরিবারে নিরাপত্তার জন্য ইন্সুরেন্স ব্যবস্থা, গ্রামীণ তহবিল গঠন ও হয়রানি গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে নদী দুষণ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়লা পরিহার বন্ধ ও নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করলেই মাছের উৎপাদন বাড়বে।’

সংলাপে অংশগ্রহণকারী মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা বলেন, চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মালবাহী জাহাজের কারণে জেলেদের মাছ ধরার জাল প্রতিনিয়ত কেটে যায়। এরপর জাহাজের বর্জ্য ও পোড়া তেল জলাশয়ের পানিতে পতিত হয়ে মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করছে। মাঝসমুদ্রে ডাকাতি ও জলদস্যুদের আক্রমণ এবং মাছ না পাওয়ায় মহাজনের দাদনের টাকা ফেরত না দিতে পেরে বহু জেলে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হচ্ছে।

এছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে ইলিশ মাছ ধরার উপরে যে অবরোধ আরোপ করা হয়, তা যেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবরোধ সময়সীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেওয়া হয়- সেই দাবি জানান তারা।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

ইলিশ টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর