গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি দেবে না সরকার, দাম সমন্বয় হবে নিয়মিত
১৮ মে ২০২৩ ১৯:৩৬
ঢাকা: গ্যাস ও বিদ্যুৎখাতে সরকার আর ভর্তুকি দেবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম এখন থেকে নিয়মিত সমন্বয় করা হবে। দাম সমন্বয় বিষয়ে নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংক ও পাওয়ার ডিভিশন আয়োজিত ‘নিউ মেকানিজম টু সাপোর্ট সিস্টেমেটিক আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড একসেস টু ল্যান্ড ফর রিনিউএবল এনার্জি (ইউটিলিটি স্কেল সোলার) ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন।
তিতাস আবারও গ্যাসের দাম বাড়াতে চায় এমন সংবাদ প্রকাশের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। এখন সরকারের মূল লক্ষ্য সাশ্রয়ী বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা। তার অংশ হিসেবে আগামী দুই বছরের মধ্যে ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
এর আগে, কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভূমি, অর্থায়ন সংকট এবং বিশ্বব্যাপী সুদের হার বৃদ্ধি বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে বাধা তৈরি করছে। দেশে জ্বালানি রূপান্তর টেকসই করার জন্য প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা। এ জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দেওয়া হয়েছে। সোলার হোম সিস্টেম, মিনি-গ্রিড এবং সৌর সেচ ব্যবস্থার মতো বিতরণকৃত নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ সাফল্য পেয়েছে। আমাদের জমিতে স্বল্পতা রয়েছে। তাই আমরা পরিকল্পনা করছি স্কুল-কলেজের ছাদ, বড় বড় শিল্প-কারখানার ছাদগুলোকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগাতে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কপ ২৬ এ সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জির দেশে রূপান্তর হবে বাংলাদেশ। যা পরমাণু, গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসতে পারে। সে লক্ষ্য অর্জনে আমরা মহাপরিকল্পনা রিভিউ করতে উদ্যোগ নিই। কিন্তু আমদের বড় জনগোষ্ঠীর ছোট দেশে ভৌগোলিক নানা চ্যালেঞ্জ আছে। আমাদের আর্থিক সক্ষমতা, জমির স্বল্পতার চ্যালেঞ্জ আছে। যোগাযোগ অবকাঠামোতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত এক দশক ধরে আমরা সোলার ব্যবহারের চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের সোলার হোম সিস্টেমে জোর দিতে বলেছেন। এক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়া হয়। এতে করে সৌরবিদ্যুতে গত ১০ বছরে বিস্ময়কর পরিবর্তন হয়েছে। সবাই এখন জানে, বুঝে সোলার পাওয়ার কী। সরকারি কলেজ, বিদ্যালয়, বেসরকারি শিল্প ভবনে সোলার পাওয়ার ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। এর পাশাপাশি আমাদের জমি ব্যবহারেও পরিকল্পনা করছি, স্টাডি হয়েছে, কিছু জমি চিহ্নিত হয়েছে, যেসব অকৃষি জমিতে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে। আমাদের এখন কম খরচে পাওয়া অর্থের বিনিয়োগ করতে হবে। এখন গ্রীষ্মে যে তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে, ৪০-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা গত ৫০ বছরে দেখা যায়নি। তাই দিনের বেলায় সোলার ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব। আমি মনে করি ৮ হাজার মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার ইনস্টলেশন সম্ভব।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে ২ হাজার মেগাওয়াটের ব্যবস্থা করতে চাই, যদি আগ্রহী বিনিয়োগকারী পাওয়া যায়। ১২টি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। যেখানে ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা ছিল।’
এ সব জায়গায় সোলার পাওয়ার স্থাপনের সুযোগ আছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যত বেশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার করা যাবে বিদ্যুৎ খাতে তত বেশি স্থিতিশীলতা আসবে।’
এ সময় টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানা বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে আমরা বেশকিছু পরিকল্পনা করেছি। এরইমধ্যে ৫ হাজার ৬০০ একর জমি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে। কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টু পাওয়ার, এলএনজি, উইন্ড, চায়না-হুয়াতিয়া ও পিডিবির চুক্তি হয়েছে। জমি দেওয়া হয়েছে কিছু। ৬০ লাখের বেশি সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়েছে। কয়েক হাজার সেচপাম্প চলে সৌরশক্তিতে। সব মিলিয়ে ৯৩৬ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার ইনস্টল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের কৃষি জমির ১ শতাংশ ব্যবহার করতে পারলে ৫০ হাজার মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার স্থাপন করা সম্ভব। কিন্তু পর্যাপ্ত জমির অভাবে বাড়ানো যাচ্ছে না। ভাসমান সোলার, জমির মাল্টিপল ব্যবহার, শিল্প কারখানার ভবন ব্যবহার করলে ভালো সম্ভাবনা আছে। সোলার পাওয়ার দিয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ এর পুরোপুরি লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। অন্যান্য উৎস ব্যবহারেও গুরুত্ব দিতে হবে।’
ভবিষ্যতে এ ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি। এ সময় জানানো হয়, দেশের তিনটি এলাকা সোলার পাওয়ারের সম্ভাবনা নিয়ে স্টাডি করেছে বিশ্বব্যাংক। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের সৌর বিদ্যুতে বড় একটি পরিবর্তন আসবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান, পিডিবির চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. নুরুল আলম।
সারাবাংলা/জেআর/একে