Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পিবিআইকে বলেছিলাম, পুলিশ মামলা না করলে আমিই করব’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৮ মে ২০২৩ ২১:২৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেনকে পঞ্চম দফায় জেরা করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। জেরায় বাবুলের আইনজীবী দাবি করেছেন, ২০২১ সালে পিবিআই হেডকোয়ার্টারে বসে সেসময়কার তদন্তকারী কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা’র উপস্থিতিতে বাবুলকে তার স্ত্রী হত্যা মামলায় জড়ানোর পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী পিবিআইয়ের নির্দেশে মোশাররফ হোসেন বাবুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।

জবাবে মোশাররফ হোসেন আইনজীবীর এসব দাবি নাকচ করে বলেছেন, ‘আমিই পিবিআইকে বলেছিলাম, পুলিশ যদি মামলা না করে আমিই মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করব।’

এদিন বাবুলের আইনজীবী আরও দাবি করেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে স্ত্রীর শোকে বাবুল আক্তার কালো পোশাক পরিধান করছেন। সেই দাবিও নাকচ করে মোশাররফ বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের পর তার বাসায় থাকা অবস্থায় বাবুলকে বিভিন্ন রঙের পোশাক পরতে দেখেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষী মোশাররফ হোসেনকে জেরা করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন।

বেলা ১২টা ৫ মিনিটে মোশাররফকে পঞ্চম দিনের মতো জেরা শুরু হয়। মাঝে দুই দফায় বিরতি দিয়ে জেরা চলে একটানা বিকেল ৫টা পর্যন্ত। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় আদালত সোমবার (২২ মে) পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পিপি আব্দুর রশীদ।

মোশাররফকে বাবুলের আইনজীবীর জেরা

মোশাররফ সাক্ষ্যে জানিয়েছিলেন, বাবুল আক্তারের বান্ধবী আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওই নারী মিতুকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। মিতু দেশের বাইরে অবস্থানরত মোশাররফকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।

বাবুলের আইনজীবী বিষয়টি উল্লেখ করে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফের কাছে জানতে চান– আমলযোগ্য অপরাধ হিসেবে হত্যার হুমকির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তিনি মিতুকে বলেছিলেন কি না। জবাবে মোশাররফ জানান, তিনি মিতুকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেন। এমনকি দেশে ফিরে এ বিষয়ে পুলিশের কাছে মৌখিক অভিযোগও করেন।

জেরার সময় উপস্থিত বাবুল আক্তারকে দেখিয়ে তিনি কোন রঙের পোশাক পরেছেন সেটা মোশাররফের কাছে জানতে চান আইনজীবী। ‘কালো’ জবাব দেওয়ার পর আইনজীবী বলেন, ‘বাবুল স্ত্রীর হত্যার পর আপনার বাসায় নয় মাস ছিলেন। নয় মাস ধরে তিনি কি কি কালারের জামা পরেছেন?’ মোশাররফ জবাব দেন, ‘সবধরনের জামাই পরেছেন।’

বাবুল আক্তার স্ত্রীর শোকে সবসময় কালো জামা পরছেন, এই দাবি সত্য কি না জানতে চান আইনজীবী। মোশাররফ সেটা নাকচ করেন। মোশাররফ সাক্ষ্যে বলেছিলেন, মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল তাদের না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে মামলা করেছিলেন। আইনজীবী সেই দাবি নাকচ করে বলেন, ‘তড়িঘড়ির বিষয়টি সত্য নয়, বাবুল তখন মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।’ জবাবে মোশাররফ আইনজীবীর দাবি প্রত্যাখান করেন।

জেরায় অপর এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ জানান, তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা ২০২১ সালের ৪ অথবা ৫ মে তাকে জানিয়েছিলেন যে, বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে মিতু খুনে জড়িত থাকার সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।

এর ভিত্তিতে আইনজীবী দাবি করেন, পিবিআই মোশাররফকে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছিল। মোশাররফ জবাব দেন, ‘আমাকে বলেনি। আমি নিজ থেকে বলেছি, যদি পুলিশ মামলা না করে তাহলে আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করব।’

এক পর্যায়ে আইনজীবী দাবি করেন, ২০২১ সালের ৯ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হেডকোয়ার্টারে বসে সন্তোষ কুমার চাকমার উপস্থিতিতে বাবুলকে মামলায় জড়ানোর কার্যক্রম শুরু হয়। বাবুলের বিরুদ্ধে সাক্ষী জোগাড়ে মোশাররফও ছিলেন। মোশাররফের আনা সাক্ষী মামুন ও সাইফুলকে দিয়ে মিথ্যা ডকুমেন্ট সৃষ্টি করে আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। জবাবে এসব দাবি সত্য নয় বলে জানান তিনি।

এরপর আইনজীবীর দাবি, ১০ মে কৌশলে বাবুলকে চট্টগ্রামে পিবিআই অফিসে ডেকে নিয়ে আটক করা হয়। মোশাররফের আনা সাক্ষীদের মাধ্যমে ‘বই মেসেজ’ সৃষ্টি করা হয়। ১৭ মে পর্যন্ত বাবুলকে পিবিআই অফিসে রেখে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে প্রয়োজন অনুযায়ী বইয়ের পেছনে কিছু কথা লিখে নেওয়া হয়। জবাবে মোশাররফ এসব বিষয় তার জানা নেই বলে জানান।

জেরায় এক প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি মোশাররফকে সুযোগ দেননি, বিষয়টি তিনি ডিসি-ডিবিকে জানিয়েছিলেন। এরপর কামরুজ্জামান দেখা করেন।

জেরার শেষ পর্যায়ে এসে বাবুল আক্তারের আইনজীবী একটি গণমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজ আদালতে উপস্থাপন করেন। যেখানে দেখা যায়, মিতু হত্যার পর মোশাররফ বাবুল আক্তারের প্রশংসা করছেন। তবে আদালত সেগুলো পরে উপস্থাপনের নির্দেশনা দেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাতজনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১০ অক্টোবর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ১৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এর পর ৯ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয়েছে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে। অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া। এতে মুসা ও কালুকে পলাতক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সারাবাংলা/আইসি/আরডি/পিটিএম

জেরা টপ নিউজ বাবুল মিতু হত্যা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কুষ্টিয়া থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৮

সম্পর্কিত খবর