হুন্ডি বন্ধে অ্যাপ আনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
১৮ মে ২০২৩ ২৩:৪৫
ঢাকা: সরকার ও ব্যাংক চাইলেও হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাই হুন্ডি বন্ধে ভারতের মডেল অনুসরণ করে অ্যাপ আনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই অ্যাপ দিয়ে প্রবাসীরা পছন্দ অনুযায়ী ব্যাংকের মাধ্যমে ঘরে বসেই রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন। এটি করতে এক/দুই বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) দুই দিনব্যাপী গবেষণা সম্মেলেনের শেষ দিনে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে বৃহস্পতিবার (১৮ মে) এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল।
আলোচনায় অংশ নেন আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, আব্দুল বাকী, পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্র ও সরকারের অঙ্গীকার থাকলে বৈষম্য কমানো সম্ভব। সরকার সেটিই করছে। ব্যক্তিখাতে বিানিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। গত তিন/চার বছর ব্যক্তি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মিসম্যাচ আছে। এটি দূর করতে হবে। এখন থেকে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেই প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত।’
ড. শামসুল আলম বলেন, ‘সুদ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বর্তমান মূল্যস্ফীতি আমদানিকৃত। এটি বৈশ্বিক কারণে সৃষ্ট। এটি নিয়ন্ত্রণ সুদের হার বাড়িয়ে হবে না। সরবরাহ বাড়াতে হবে। আগামী বাজেটের মূল্যস্ফীতিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাজেট হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার।’
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘এখন মাল্টিপুল ডলার রেট করা হয়েছে সাময়িক। আগামী তিন/চার মাসের মধ্যে ডলারের রেট এক রেটে চলে আসবে। রিজার্ভ কমল কি বাড়ল সেটি বড় কথা নয়। যদি প্রতিদিন একটু একটু করে রিজার্ভ বাড়ে তাহলেই ভালো। সেইসঙ্গে আমদানি খরচ যদি কম থাকে তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন হলো আর খরচ একবারেই অনেক বেশি হয়ে গেল তাহলে ঝামেলা আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে বেসরকারি বিনিয়োগকারী সস্তায় বিদেশি ঋণ আনত বলে রিজার্ভ বেড়েছিল। কিন্তু এখন সস্তা ঋণ নেই। সেইসঙ্গে যারা ঋণ নিয়েছিল তারা ডলারের মাধ্যমে পরিশোধ করছে। এরই প্রভাব পড়েছে রিজার্ভের ওপর। বর্তমান ফাইনান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সের ঘাটতি মাইনাস ২ শতাংশ আছে। সেটি আগামী দুই মাসের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।’
বিনায়ক সেন বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী সহজ বিষয় পড়তে পারে না। অতএব মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া শহরের বৈষম্য ব্যাপক বাড়ছে।’
চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানিগুলো পাচ্ছে না দক্ষ কর্মী: বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দক্ষ কর্মী পাচ্ছে না সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি শিক্ষার দিক দিয়েও রয়েছে অনেক ঘাটতি। যেখানে প্রয়োজন উচ্চ শিক্ষার লোক সেখানে তারা তা পাচ্ছে না। এর পেছনে অন্যতম কারণ শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি। মূলত দক্ষকর্মীর এই ঘাটতি রয়েছে মূলত হালকা ও মাঝারি প্রকৌশল ও ইলেকট্রনিক খাতে। চামড়া ও অন্যান্য খাতে শ্রমিক পাওয়া গেলেও এ খাতে কাঙ্ক্ষিত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
ক্যানসার চিকিৎসায় নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার: অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যানসার চিকিৎসায় পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। যদি কোনো পরিবারে একজন মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন সেটি যদি প্রথম ধাপে ধরা পড়ে তাহলে একাটি পরিবারের নিজস্ব পকেট থেকে চলে যায় ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। এটা যদি চতুর্থ ধাপে ধরা পড়ে তাহলে প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচ হবে। ক্যানসার চিকিৎসায় ৯০ শতাংশ পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
একটি গবেষণায় বলা হয়েছে— উন্নয়ন প্রকল্পের সময় বাড়ানোর ফলে ব্যয় অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরের সড়কের ৩৬৯টি প্রকল্পের অডিড রিপোর্ট গবেষণা করে দেখা গেছে, ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৮০ শতাংশ প্রকল্পে। ব্যয় ও সময় বেড়েছে ৫০ শতাংশ, ব্যয় ও সময় কোনোটিই বাড়েনি ১৩ শতাংশ প্রকল্পে।
প্রকল্পগুলোর গড় ব্যয় বেড়ছে ২৬ শতাংশ এবং গড় সময় বেড়েছে ৯৫ শতাংশ। ভূমি, অধিগ্রহণ, দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ, নতুন অঙ্গ সংযুক্তিসহ নানা কারণে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে।
সারাবাংলা/জেজে/একে