Wednesday 21 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চকলেট দেখিয়ে শিশুকে অপহরণের পর ২ লাখ টাকায় বিক্রি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৯ মে ২০২৩ ১৮:০২ | আপডেট: ১৯ মে ২০২৩ ১৮:২৩

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চকলেট দেখিয়ে সিদ্দিক নামে এক শিশুকে অপহরণ করে দুই লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগে গোপালগঞ্জ থেকে উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-২)। গত ২৬ এপ্রিল শিশুটিকে অপহরণ করার পর শিশুর নাম দেওয়া হয় প্রণীল পাল। এরপর ওই শিশুটিকে বিক্রি করা হয়। ঘটনার ২২ দিন পর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি দুই অপহরণকারীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

শুক্রবার (১৯ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

অধিনায়ক বলেন, ‘শিশু সিদ্দিককে অপহরণের পর অনলাইনে বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। পরে প্রণীল পাল নামে স্ট্যাম্প করে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ঘটনার ২২ দিন পর গোপালগঞ্জ থেকে অপহৃত সিদ্দিককে উদ্ধার করা হয়। অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে পীযূষ কান্তি পাল (২৯) ও তার সহযোগী স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল (২৫), সুজন সুতার (৩২), পল্লব কান্তি বিশ্বাস (৫২) এবং তার স্ত্রী বেবী সরকারকে (৪৬)।

তিনি বলেন, “গত ২৬ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন ঢাকা উদ্যানের মনির মিয়ার বাজার সংলগ্ন এলাকায় মো. দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়ে হুমায়রা (৮) ও তার ছোট ছেলে মো. সিদ্দিকসহ (৩) আরও ৭ থেকে ৮ জন শিশু-কিশোর খেলছিল। এ সময় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি এসব শিশু-কিশোরকে চকলেট খাওয়ান। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়েকে বলে ‘তুমি বাসায় চলে যাও। আমি তোমার ভাইয়াকে বাজার থেকে আম কিনে দেব।’ শিশুটির বড় বোন যেতে না চাইলে তাকে ধমক দিয়ে বাসায় চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়, আর তিন বছরের শিশু সিদ্দিককে বাজার থেকে আম কিনে দেওয়ার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যায়।”

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী শিশুর মা কাজ শেষে বাসায় ফিরলে বড় মেয়ে হুমায়রা বিষয়টি তার মাকে জানায়। অনেক খোঁজার পরও সন্ধান না পেয়ে পরে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে শিশু সিদ্দিকের পরিবার।

র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক বলেন, ‘২৯ এপ্রিল অপহৃত শিশুটির বাবা দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে র‍্যাব-২। এ ঘটনায় দেশব্যাপী বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অপহৃত শিশুকে উদ্ধারে দেরি হওয়ায় শিশু সিদ্দিকের বাবা র‍্যাব-২ এর কার্যালয়ে একটি অভিযোগও দেন।’

অতিরিক্ত ডিআইজি আরও বলেন, ‘র‍্যাব-২ ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ, পর্যালোচনা, বিভিন্ন সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারে, অপহরণকারী ব্যক্তি পীযূষ কান্তি পাল ও তার সহযোগী স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল। পীযূষ দম্পতি শিশুটিকে বিক্রির জন্য সুজন সুতার নামে ব্যক্তির মাধ্যমে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার দম্পতির কাছে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রথমে সুজন সুতারকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহৃত শিশুকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানাধীন তাড়াসি গ্রামে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়। সুজন সুতারের নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার দম্পতির কাছে ছিল অপহৃত শিশু সিদ্দিক।

এরপর ঢাকার সাভার এলাকায় আরেকটি অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, পীযূষ কান্তি পাল একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়াকালীন একটি স্পা সেন্টারে কাজ করতেন। স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় রিদ্ধিতা পালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০২০ সালে তারা বিয়ে করেন।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, মূলত স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় থেকে পীযূষ কান্তি পাল মানবপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০২২ সালের মে মাসে মানবপাচারের অভিযোগে বনানী থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলায় গ্রেফতারের পর তিনি কিছুদিন জেলহাজতে থাকার পর জামিনে বের হন। পীযূষ ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সনাতনী উদ্যোক্তা ফোরাম’ নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে সন্তান বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিলেন। গ্রেফতার সুজন সুতারের সঙ্গে ওই ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে রিদ্ধিতা পালের পরিচয় হয়।

অতিরিক্ত ডিআইজি আনোয়ার হোসেন খান বলেন, পীযূষ পাল ও রিদ্ধিতা পাল বিক্রির উদ্দেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশু অপহরণ করে থাকেন। ২৬ এপ্রিল পীযূষ কান্তি পাল সাভার এলাকা থেকে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা উদ্যান এলাকায় আসেন। সাড়ে ১২টার দিকে শিশু সিদ্দিককে রাস্তায় চকলেটের লোভ দেখিয়ে কোলে নিয়ে সিএনজিযোগে গাবতলী হয়ে সাভার তার বাসায় নিয়ে যান। পরে শিশু সিদ্দিককে প্রণীল পাল নাম দিয়ে স্ট্যাম্প করে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। প্রমাণস্বরূপ প্রণীল পালের টিকা কার্ড, রিদ্ধিতা পালের জন্মসনদ এবং বিজন বিহারী পালের আইডি কার্ডের ফটোকপি দেন।

গ্রেফতার সুজন সুতারকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার নিকটাত্মীয় পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও স্ত্রীর বড় বোন বেবী সরকারের একটি সন্তান প্রয়োজন হওয়ায় সুজন সুতার পীযূষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালের কাছ থেকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে অপহৃত শিশু সিদ্দিককে কিনে নেন। পরে ২৬ এপ্রিল রাতে সিদ্দিককে গোপালগঞ্জ দিয়ে আসেন।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

ঢাকা উদ্যান মোহাম্মদপুর শিশু অপহরণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর