ফেরিওয়ালার কাছ থেকে চাঁদাবাজি: চসিক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা
১৯ মে ২০২৩ ১৯:১৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাহাড় কাটায় আলোচিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে এবার এক ফেরিওয়ালাকে মারধর করে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ মে) রাতে নগরীর আকবর শাহ থানায় মামলা দায়ের করেন অপু প্রধান নামে এক ব্যক্তি। তিনি নগরীর পূর্ব ফিরোজ শাহ এলাকার এইচ ব্লক মোড়ে সিরামিকস, ক্রোকারিজ ও মুদি মালামাল ফেরি করে বিক্রি করেন।
আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর সারাবাংলাকে বলেন, ‘থানায় একটি মামলা রেকর্ড হয়েছে। আমরা অভিযোগ খতিয়ে দেখছি।’
জহুরুল আলম জসিম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বুধবার রাস্তার পাশে মালামাল বিক্রির সময় বিকেল ৫টার দিকে কাউন্সিলর জসিম ‘তুই নাকি লটারি দিয়েছিস’- এ কথা বলে কোনো উত্তর দেয়ার সুযোগ না দিয়ে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারতে থাকে এবং চিৎকার করে গালিগালাজ করে বলতে থাকে- কার পারমিশন নিয়ে আমার এলাকায় ব্যবসা করতেছস?’
এসময় জসীম ব্যবসা করতে হলে তার অনুমতি লাগবে এবং হাদিয়া (চাঁদা) ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না বলেও হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন ওই ফেরিওয়ালা। মামলায় কাউন্সিলর জসিম ছাড়াও অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনকে আসামি করা হয়।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক ফেরিওয়ালাকে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসীম প্রকাশ্যে চড়থাপ্পড় ও লাথি মারছেন। এসময় ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া পুলিশের একটি টহল গাড়িতে ওই ফেরিওয়ালাকে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, ফেরিওয়ালাকে তুলে দেওয়ার সময় কাউন্সিলর জসিম নিজে তার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আর মামলা না করায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ওই ফেরিওয়ালাকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই ব্যক্তি (অপু প্রধান) ফেরি করে মালামাল বিক্রির আড়ালে জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করছিল। পাঁচদিন ধরে বলার পরও সরে না যাওয়ায় পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।’
২০২২ সালের ১০ অক্টোবর আকবর শাহ থানার লেকসিটি আবাসিক এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিম ও তার স্ত্রীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল পরিবেশ অধিদফতর। এরপর গত ২৬ জানুয়ারি উত্তর পাহাড়তলীর সুপারি বাগান এলাকায় পাহাড় কাটা ও ছড়াখাল দখল পরিদর্শনে যাওয়া বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে হামলার অভিযোগ আছে এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে।
গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় নগরীর আকবর শাহ থানার বেলতলীঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসে একজন নিহত ও চার জন আহত হন। ১১ এপ্রিল সেই পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিন প্রকৌশলীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় মামলা দায়ের করে পরিবেশ অধিদফতর।
‘অগ্রণী ব্যংক অফিসার্স কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি’র প্রায় ১১ একর আয়তনের পাহাড়টি কেটে সড়ক নির্মাণ করছিল সিটি করপোরেশন। আর এ কাজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন কাউন্সিলর জসিম। গত ১১ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা না মেনে চসিক তাদের কাজ অব্যাহত রাখার একপর্যায়ে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে।
গত ২৯ এপ্রিল নগরীর আকবর শাহ থানার উত্তর পাহাড়তলী এলাকায় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের পাহাড় কেটে নির্মাণাধীন গরুর খামার গুঁড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।
সারাবাংলা/আরডি/এমও