Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘চিত্ত দিয়ে’ গড়ে তোলা ক্যাম্পাসে প্রাণের সম্মিলন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ মে ২০২৩ ২১:৩০

চট্টগ্রাম ব্যুরো : সবুজে ঘেরা পাহাড়ে নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে গড়ে তোলা ব্যতিক্রমী এক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি। গাছের শাখায় দোল খায় পাখি, সবুজ ঘাসে খেলা করে মিষ্টি রোদ। এর ফাঁকে ফাঁকে গড়ে উঠেছে যেসব ভবন, সেগুলো নিছক ইট, কাঠ-পাথরের সম্মিলন নয়, আকাশছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নামা কোনো দালানও নয়, এগুলো যেন একেকটি ঐতিহাসিক স্থাপত্যকীর্তি !

প্রতিটি স্থাপনায় আধুনিকতা আর ধ্রুপদী নির্মাণশৈলীর ছাপ খুঁজে ফেরেন নন্দনতাত্ত্বিক মূল্যবোধের মানুষ। শুধু ক্যাম্পাস সাজিয়েই অনন্য নয় দেশের বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও নিয়মিত রেখে চলেছে ব্যতিক্রমী নানা দৃষ্টান্ত। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কর্ণধার সাঈদ আল নোমানের ভাষায়, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি (ইডিইউ) বিত্ত দিয়ে গড়ে ওঠেনি, চিত্ত দিয়ে গড়ে উঠেছে। আর এই চিত্তের টানেই প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থীর সম্মিলনে মুখরিত হয় চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব নাসিরাবাদের নোমান সোসাইটির সুবিশাল ক্যাম্পাস।

বিজ্ঞাপন

চিত্ত দিয়ে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে ব্যতিক্রম হিসেবে গড়ে তুলেছে আরও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারের পাঠদান শুরু হয় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান খাইয়ে। শুক্রবার (১৯ মে) এমনই এক আয়োজনে প্রাণ-প্রকৃতির ক্যাম্পাসে বসেছিল হাজারো প্রাণের মেলা। নতুন-পুরাতন শিক্ষার্থী শুধু নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও এতে শরিক হয়েছিলেন।

শুক্রবার সকালে ছিল ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রারম্ভ অনুষ্ঠান। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, রাজনীতি, জনপ্রতিনিধি ও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলানোর পরও যিনি শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত, তিনিই এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। সবুজ ক্যাম্পাসের নান্দনিক স্থাপনা দেখে বিমুগ্ধ মন্ত্রীও। অকুন্ঠ প্রশংসা করেছেন প্রতিষ্ঠান পরিচালনয় যুক্তদের। মানসম্মত শিক্ষার প্রশংসার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের দিয়েছেন শিক্ষকসুলভ নানা উপদেশও।

বিজ্ঞাপন

বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পাঠদান আর সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় নয়। একজন শিক্ষার্থী বিশ্বঅঙ্গনে যাতে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে, বিশ্বময় সে যাতে দাপিয়ে বেড়াতে পারে, বিশ্বঅঙ্গনে সে যাতে তার যোগ্যতাকে তুলে ধরতে পারে সেজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের শেখাতে হবে কিভাবে জীবন গড়তে হবে, কিভাবে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হবে, কিভাবে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। কিভাবে উজান ঠেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের বহুমাত্রিক মেধার বিকাশ ঘটাতে হবে, তাহলেই সেটি বিশ্ববিদ্যালয়। না হয় সেটির নাম বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া শ্রেয় নয়।’

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি সেই কাজটিই করে মন্তব্য করে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে আরও বিস্তৃত পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনার তাগিদ দেন।

তথ্যমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বড় কিংবা ছোট নয়, সেখানে কোয়ালিটি এডুকেশন দেয়া হয় কি না সেটিই হচ্ছে মুখ্য বিষয়। আজকের বাস্তবতায় জীবন সম্পর্কে মানুষের ধারণা পাল্টে গেছে। জীবন শুধু নিজের জন্য নয়, জীবন দেশ সমাজ ও পরিবারের জন্য। স্বপ্ন শুধু নিজের জন্য দেখা নয়, সমাজ ও দেশের জন্যও স্বপ্ন দেখতে হয়। একজন ব্যক্তি তখনিই সত্যিকার অর্থে ভালো মানুষ হয়, যখন তিনি মেধা, মূল্যবোধ দেশাত্ববোধ এবং মমত্ববোধের সমন্বয় ঘটাতে পারে তার চরিত্রের মধ্যে। তাহলেই তিনি সত্যিকার অর্থে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে দাঁড়ায়।’

‘সেই মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাটা পেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি শেখায় তোমাকে ভালো পাশ করতে হবে, পাশ করে একটা বড় চাকুরি পেতে হবে কিংবা ব্যবসা প্রশাসনে পড়াশোনা করে বড় এক্সিকিউটিভ হতে হবে, তারপর অনেক অর্থ উপার্জন করতে হবে, তাহলে নিজের জন্য শিখবে, নিজের জন্য পড়বে, দেশ সমাজ জাতি তার কাছ থেকে খুব বেশি কিছু পাবে না।’

কথায় কথায় শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখতে বললেন তথ্যমন্ত্রী। বহুমাত্রিক মেধার বিকাশ ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোনোকিছুই প্রতিবন্ধকতা নয়, প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ভয় ও প্রচেষ্টার অভাব এবং স্বপ্ন দেখতে না পারা। স্বপ্নের সাথে প্রচেষ্টাকে যুক্ত করতে হবে। অভিভাবকদের স্বপ্ন দেখাতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। স্বপ্নের বাস্তবায়নের জন্য তারা যাতে প্রচেষ্টাকে যুক্ত করে সেটিই তাদের শিক্ষা দিতে হবে। তাহলে সব স্বপ্ন নাহলেও অনেক স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়িত হবে।’

অনুষ্ঠানে নবাগত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান বলেন, ‘ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি বিত্ত দিয়ে তৈরি হয়নি, চিত্ত দিয়ে তৈরি হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে তোমরা শুধু একটি সার্টিফিকেটধারী হলে হবে না, বরং ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন যুগান্তকারী এবং সময়োপযোগী প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেদের বহির্বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক জীবনের জন্য দক্ষ মানুষ হিসেবে তৈরি করতে পারবে।’

ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খানের সভাপতিত্বে ও ফ্যাকাল্টি মেম্বার তাবাসসুম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ট্রেজারার অধ্যাপক সামস-উদ দোহা, রেজিস্ট্রার সজল কান্তি বড়ুয়া বক্তব্য রাখেন।

নতুন শিক্ষাবর্ষের যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমন্ত্রিত হয়ে ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন তাদের অভিভাকরাও। প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী তৈরি করা ক্যাম্পাসে নতুন শিক্ষার্থীরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, আনন্দ আড্ডা, হইহুল্লোড়, ছবি তোলার মধ্য দিয়ে পার করেছে একটি দিন। তাদের আনন্দে বাড়তি অনুষঙ্গ ছিল মেজবানের খাওয়াদাওয়া। সাঈদ আল নোমান নিজেই টেবিলে-টেবিলে ঘুরে মেজবানের আয়োজন তদারক করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন-পুরাতন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক মিলিয়ে দেড় হাজার মানুষের জন্য মেজবানের আয়োজন করা হয়। গরুর গোশত, নলা, চনার ডাল, খাসি, মুরগী, ফিরনি দিয়ে সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়।

চট্টগ্রামের আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজনে শিক্ষাবর্ষের যাত্রা শুরুর নজির দেখা যায় না। ইডিইউতে কেন এমন আয়োজন, প্রশ্ন ছিল সাঈদ আল নোমানের কাছে, যিনি আমেরিকার সেন্ট্রাল মিশিগান ইউনিভার্সিটি, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরেছেন।

সাঈদ আল নোমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে আমার বাবা আবদুল্লাহ আল নোমান প্রতিবছর ঈদের পরদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের জন্য মেজবানের আয়োজন করে আসছেন। মেজবান চট্টগ্রামের একটা ঐতিহ্য। সেই ছোটবেলা থেকে দেখেছি, ঈদের আগে মেজবান আয়োজনের তোড়জোড়, ঈদের পরদিন অতিথিদের খাওয়ানো। এই ঐতিহ্য, এই সংস্কৃতি আমি ধারণ করি। আমি বলেছি যে, ইডিইউ বিত্ত দিয়ে নয়, চিত্ত দিয়ে তৈরি হয়েছে। একটা দিন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক, আপনজন সবাইকে নিয়ে সমবেত হওয়া, সবাই যেন ভাবেন, এটা তাদের প্রাণের ক্যাম্পাস, সবার মধ্যে বন্ধনটা যেন দৃঢ় হয়, সেই চিন্তা থেকে করা।’

২০২১ সাল থেকে ইডিইউ ক্যাম্পাসে মেজবানের আয়োজন হয়ে আসছে। প্রতিবছর তিনটি সেমিস্টারের ক্লাস শুরুর আগে মেজবানের আয়োজন করা হয়। শুক্রবার (১৯ মে) সপ্তমবারের মতো এ আয়োজন করা হয়েছে বলে জানালেন সাঈদ আল নোমান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান ২০০৬ সালে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ছেলে সাঈদ আল নোমান প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান। ২০০৮ সালে ইডিইউ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।

বিজনেস, ইঞ্জিনিয়ারিং ও লিবারেল আর্টস- এ তিনটি স্কুলের অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে মোট ১১টি প্রোগ্রামে প্রায় ২৬০০ শিক্ষার্থী এই ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করছে। বিবিএ, এমবিএ, ইংরেজি, অর্থনীতি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ও এমএসসি, ইলেক্ট্রনিক ও ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ও এমএসসি এবং মাস্টার্স অব পাবলিক পলিসি অ্যান্ড লিডারশিপ- এসব বিভাগ আছে ইডিইউতে।

সারাবাংলা/আরডি/একে

ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর