ট্রায়াল শেষ হলেও মন্ত্রীর অপেক্ষায় করোনা ভ্যাকসিনের ৪র্থ ডোজ
১৯ মে ২০২৩ ২৩:০৩
ঢাকা: মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত ১ মার্চ থেকে দেশে বন্ধ রয়েছে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধী বুস্টার ভ্যাকসিনের চতুর্থ ডোজ। স্বস্তির খবর হলো— ১১ মে’র মধ্যে বৈশ্বিক ভ্যাকসিন বিতরণ উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজারের ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এসেছে দেশে। এরইমধ্যে শেষ হয়েছে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল রানও। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সময় দিতে না পারায় ভ্যাকসিনের চতুর্থ ডোজ প্রয়োগ কার্যক্রম অচিরেই শুরু করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি দেশে ফেরার পর ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এক্ষেত্রে মে মাসের শেষ সপ্তাহে বা জুনের প্রথম সপ্তাহে এই কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. সাঈদ জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভ্যাকসিন চেয়ে কোভ্যাক্সের কাছে আবেদন করেছিলাম। কোভ্যাক্স তাতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক টিকাদান কর্মসূচির আওতায় কোভ্যাক্স বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন সরবরাহের অঙ্গীকার করেছে। প্রাথমিকভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৫ হাজার ৯২০ ডোজ ফাইজার ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে এসেছে। ৩০ এপ্রিল দুই ধাপে পাঁচ লাখ ৫২ হাজার ৯৬০ ডোজ করে জার্মানি থেকে ১১ লাখ পাঁচ হাজার ৯২০ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে পৌঁছেছে। এরপরে ৭ মে আমরা আরেকটি চালান রিসিভ করি। ১১ মে আমরা সর্বশেষ একটি চালান রিসিভ করেছি। সবমিলিয়ে ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন রিসিভ করেছি।’
ডা. সাঈদ জামান আরও বলেন, ‘আমরা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভ্যাকসিনের একটি ট্রায়াল দেব। সে জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতিও পেয়ে গেছি। এখন ভ্যাকসিন বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির অনুমতি পেলেই ট্রায়াল শুরু করতে পারব। এটি যেহেতু ফাইজারের আপগ্রেটেড ভার্সনের ভ্যাকসিন তাই আমরা চার থেকে পাঁচ দিন ট্রায়াল দিয়ে দেখব। সেটির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আমরা সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু করব।’
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এরইমধ্যে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল রান সম্পন্ন করা হয়েছে। ট্রায়ালের ফলাফল সন্তোষজনক হওয়ায় খুব দ্রুতই ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কিছু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য দেশের বাইরে থাকায় অচিরেই তা সম্ভব হচ্ছে না।’
ফাইজারের নতুন এই ভ্যাকসিনের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. সাঈদ জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণের নানা রকম ভ্যারিয়েন্টের বিষয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। এর ফলে অনেকেই ভ্যারিয়েন্ট পাল্টালে ভ্যাকসিন কার্যকর থাকবে কিনা সে বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে থাকেন। আর তাই ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমাদের নতুনভাবে আসা ফাইজারের এই ভ্যাকসিনগুলো ভ্যারিয়েন্ট স্পেসিফিক অর্থাৎ সর্বশেষ ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর। এটি ফাইজারের সর্বশেষ নতুন ধরন যা আমরা পাছি কোভ্যাক্সের মাধ্যমে।’
এর আগে, ২ মে ওমিক্রন ও ডেল্টা ভাইরাস প্রতিরোধে নতুন ভ্যাকসিন বাইভেলেন্ট প্রয়োগ শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছিলেন, এটি একটি কম্বাইন্ড ভ্যাকসিন, যা ওমিক্রন ও ডেল্টা প্রতিরোধে কাজ করবে। এখন লোকজন বুস্টার ডোজ নিতে তেমন আগ্রহী নন। আমরা সবাইকে এই ডোজ গ্রহণ করতে বলছি, প্রচারণা চালাচ্ছি। নতুন এ ভ্যাকসিন বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হবে। ১২ বছরের বেশি বয়সীরা এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারবেন।
এর আগে, ২৭ ফেব্রুয়ারি মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে ১ মার্চ থেকে দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ (তৃতীয় ও চতুর্থ) সাময়িকভাবে স্থগিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। জানানো হয়, কোভ্যাক্স থেকে ভ্যাকসিন আসা সাপেক্ষে আবারও এ কার্যক্রম শুরু হবে।
এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েন চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীরা। মোবাইলে এসএমএস পেলেও ভ্যাকসিন না থাকায় কেন্দ্রে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে অনেককে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (১৯ মে) পর্যন্ত দেশে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছেন ১৫ কোটি সাত লাখ ৪৪ হাজার ২৬৪ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে প্রথম ডোজ হিসেবে। এ ছাড়া ১৩ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার ৬০৪ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে।
এখন পর্যন্ত দেশে ছয় কোটি ৭৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪২ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে প্রথম বুস্টার বা তৃতীয় ডোজ ভ্যাকসিন হিসেবে। তার মাঝে ৩১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১ জনকে ভ্যাকসিনের চতুর্থ ডোজ বা দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এসবি/একে