আগামী অর্থবছরে ৩১২ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয়
২১ মে ২০২৩ ১১:২৮
ঢাকা: আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৩১২টি উন্নয়ন প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এসব প্রকল্প সমাপ্তির জন্য চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু এই লক্ষ্য অর্জন রয়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে কোনো অর্থবছরই প্রকল্প শেষ করার যে লক্ষ্য ধরা হয় তা পূরণ হয় না। আবার শেষ হলেও শতভাগ কাজ শেষ না করেই অধিকাংশ প্রকল্পের বাস্তবায়ন সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে এরকম সম্ভাব্য সমাপ্য প্রকল্প ছিল ২৮০টি। তবে সংশোধিত এডিপি তৈরির সময় সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩১৮টিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ লক্ষ্য পূরণ কতটা হবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। কেননা ইতোমধ্যেই অনেক প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু হয়েছে।
সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুরু থেকেই প্রকল্পগুলোতে কঠোর মনিটরিং করা দরকার। যেসব প্রকল্প সমাপ্ত করা হবে বলে ধরা হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে জোরদার মনিটরিংয়ের বিকল্প সেই। এখানে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতাও থাকে। সেই সঙ্গে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।’
এডিপি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আগামী অর্থবছরের জন্য সম্ভাব্য সমাপ্য যেসব প্রকল্প ধরা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি (৪৯টি) বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে সড়ক পরিবহন খাতে। এছাড়া সাধারণ সরকারি সেবা খাতে রয়েছে দু’টি, জনশৃঙ্খলা ও সেবা খাতে সাতটি এবং শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে সাতটি প্রকল্প।
আরও আছে কৃষি খাতে ২৩টি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ছয়টি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৫টি, পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ২৫টি, গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলী খাতে ৪২টি, স্বাস্থ্য খাতে ৪৬টি, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতে ছয়টি, শিক্ষায় একটি, সামাজিক সুরক্ষায় নয়টি এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে রয়েছে ১৮টি প্রকল্প। এসব বিনিয়োগ প্রকল্পের বাইরে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প সমাপ্তির লক্ষ্য আছে ১৮টি। কারিগরি সহায়তা প্রকল্প রয়েছে ২৯টি এবং স্বায়স্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প আছে ৯টি।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতেই ৩৫৫টি প্রকল্প শেষ করা হবে বলে ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ছিল ৩২১টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৩০টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প ছিল চারটি। মাঝপথে এসে ২৩টি প্রকল্প কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) ৩৭৮টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ৩২২টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৩৭টি এবং নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প রয়েছে ১৯টি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ হয়েছে ২৯৪টি প্রকল্প। এই তালিকার বাইরে থাকা প্রকল্পের মধ্যে শেষ হয়েছে ৪২টি। এ অর্থবছর মোট সমাপ্ত প্রকল্প দাঁড়ায় ৩৩৬টিতে। কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে। শতভাগ কাজ শেষ করে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় মাত্র ১৫০টি প্রকল্প। বাকি ১৮৬ প্রকল্পে কাজ কিছু কিছু বাকি থাকলেও শেষ করা হয়েছে।
আইএমইডি (বাস্তবায়ন,পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৪৩৯টি উন্নয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে অর্থবছর শেষে শেষ হয়েছে ২৩৬টি প্রকল্প। বাকি ২০৩টি প্রকল্প পরের অর্থবছরের এডিপিতে যোগ হয়েছে। তবে তালিকার বাইরে থাকা ২৮টিসহ এ অর্থবছরের মোট প্রকল্প শেষ হয় ২৬৪টি। এগুলোর মধ্যে পুরোপুরি শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে ১৪০টি প্রকল্পে। কিছু কাজ বাকি থাকলেও ১২৪টি প্রকল্পের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে শেষ করা হয়েছে।
এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৩০৫টি প্রকল্প। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমাপ্ত হয়েছে ১৪১টি প্রকল্প। বাকি ১৬৪টি প্রকল্প চলতে থাকে। লক্ষ্যের বাইরে ৪১টিসহ এ অর্থবছরের মোট সমাপ্ত হওয়া প্রকল্প হচ্ছে ১৮২টি। তবে শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৯০টির। একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৩৪৬টি উন্নয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে শেষ হয়েছে ২৪৫টি। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রার বাইরে থাকা ৬৭টিসহ মোট শেষ হয় ৩১২টি প্রকল্প। এর মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হয় মাত্র ১৫৫টি প্রকল্পের।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ২৯২টি উন্নয়ন প্রকল্প। এর মধ্যে শেষ হয়েছে ১৮৮টি। নির্ধারিত প্রকল্পের বাইরে ৫৮টিসহ এ অর্থবছরের মোট সমাপ্ত প্রকল্প সংখ্যা ছিল ২৪৬টি। তবে শতভাগ কাজ হয়েছে ১৪২টি প্রকল্পের। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্প ছিল ৩১৫টি। এর মধ্যে শেষ হয় ২৪৩টি। তবে নির্ধারিত নয় এমন ১০৩টিসহ এ অর্থবছর মোট প্রকল্প শেষ করা হয় ৩৪৬টি। এসব প্রকল্পের মধ্যে শতভাগ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছিল মাত্র ১৬৭টি প্রকল্পের।
সাবেক আইএমইডি এবং পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, প্র‘তিশ্রুতি দিয়েও প্রকল্প শেষ করতে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়, প্রকল্প গ্রহণকারী সংস্থা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। এছাড়া মন্ত্রণালয়গুলোর অ্যাকশন প্ল্যান এবং রোড ম্যাপের মধ্যে দুর্বলতা থাকে। এসব কারণে দেখা যায় শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য পূরণ হয় না।’
সারাবাংলা/জেজে/এমও