ডিসি সাহেবের বলীতে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরিফ ও নুর
২১ মে ২০২৩ ১৮:১০
কক্সবাজার: জেলার ঐতিহ্যবাহী ডিসি সাহেবের বলী খেলার ৬৮তম আসরে এবার যুগ্ম-চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কুমিল্লার বাঘা শরিফ ও কক্সবাজারের নুর মোহাম্মদ। এবারের খেলায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও গ্যালারিতে ছিল দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। আয়োজকরা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গ্রামীণ এই ঐতিহ্যবাহী খেলা আগামীতে আরও বড় পরিসরে করা হবে।
শনিবার (২০ মে) সন্ধ্যায় শেষ হওয়া দুই দিনের এই বলি খেলায় কানায় কানায় দর্শকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজারের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম। বানশি আর ঢাকের তালে বলীদের নাচে উল্লাসে মেতে উঠে গ্যালারির দর্শকরা। বলীদের লড়াই দর্শকের মাঝে ছড়িয়ে দেয় উত্তেজনা।
টান টান উত্তেজনার মধ্যে চলছিল চ্যাম্পিন দু’জনের খেলা। টানা ৪০ মিনিটের শক্তির জোর আর কৌশলে কেউ কাউকে কুপোকাত করতে পারেনি। শেষমেশ খেলা পরিচালকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুগ্ম-চ্যাম্পিয়ন হন কুমিল্লার বাঘা শরিফ ও কক্সবাজারের নুর মোহাম্মদ বলী।
এদিকে, বলী খেলার স্থান ঘিরে ধরা নানা অব্যবস্থাপনার জন্য আয়োজকদের দায়ী করেন দর্শনার্থীরা। মিনহাজ উদ্দিন নামে এক দর্শক জনান, ‘সন্তানকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য সর্ম্পকে বুঝাতে পরিবার নিয়ে বলী খেলা দেখতে এসেছি। টিকেট কেটে গ্যালারিতে বসেও ঠিকঠাক খেলা দেখা যাচ্ছিল না। কারণ, লোকজন বিশৃঙ্খলভাবে মাঠের ভেতরে প্রবেশ করছিল। এটি আয়োজকদের ব্যর্থতা।’
সাইমা ইয়াছমিন নামে এক দর্শক বলেন, ‘স্বামীর মঙ্গে বলী খেলা দেখতে এসে খুবই ভালো লাগছে। এ যেন এক উৎসব। কিন্তু ব্যবস্থাপনার ক্রটি রয়েছে। ঠিকঠাক মতো খেলা দেখতে পারিনি।’
ইকবাল হোসেন নামে একজন জানান, প্রতি বছর তিনি খেলা দেখতে আসেন। কিন্তু খেলোয়াড়দের মধ্যে তেমন নতুন মুখ নেই। তরুণ দর্শক থাকলেও তরুণ খেলোয়াড় নেই। এই খেলার প্রতি তাদের তেমন একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই খেলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার।
জয়-পরাজয় নিয়ে একে অন্যকে দোষ দেওয়অসহ নানা অভিযোগ খেলোয়াড়দের। যুগ্ম চ্যাম্পিয়নের একজন কুমিল্লার বাঘা শরিফ বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ খেলার চেয়েও অভিনয় বেশি করেছে। একটু পর পর বিরতি নিয়েছে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য।’ এই অর্জন নিয়ে তিনি কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নন।
যুগ্ম চ্যাম্পিয়নের আরেকজন কক্সবাজারের নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ বলী খেলতে আসেননি, মারামারি করতে এসেছেন। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে বসেছেন। এটি বলি খেলার পর্যায়ে পড়ে না।’
অবসরে যাওয়া মহেশখালীর কামাল বলী জানান, বলীদের এখন আর মূল্যায়ন করা হয় না। সব খেলার মূল্যায়ন, পরীক্ষণ ও সম্মান থাকলেও বলি খেলোয়াড়রা বরাবরই অবহেলিত।
বলি খেলা ও বৈশাখী মেলা উৎযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আগামীতে আরও বড় পরিসরে দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়দের নিয়ে বলিখেলার আয়োজন করা হবে।’
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই খেলা স্মার্টফোন আসক্ত নতুন প্রজন্মের কাছে শিক্ষনীয়। এছাড়া খেলাধুলা’ই সুস্থ-সুন্দর মাদকমুক্ত জীবন ব্যবস্থা দিতে পারে।’
উল্লেখ্য, ১৯৫৬ সাল থেকে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী ডিসি সাহেবের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা। এবারের আসরে অংশ নেন প্রায় তিনশ’ বলী।
সারাবাংলা/পিটিএম