Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেগম রওশন এরশাদের জাপায় ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ মে ২০২৩ ২২:০৯

ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হলে আর মাত্র ৭ মাস বাকি। এই সময়ের মধ্যে বিরোধীদলগুলো জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাতীয় পার্টি কাদের এরইমধ্যে ১০৩ জনের একটি তালিকা করেছে।এরমধ্যে ৫৩ জনকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করে মনোনয়নের চিঠিও দিয়েছে। তবে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে। আর দলটিতে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে চলছে রমরমা বাণিজ্য। দায়িত্বশীর সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

দলটির একাধিক সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনে হবে নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে তা নিয়ে যে ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে জন্যই দলটির কার্যক্রম নাকি স্থবির হয়ে আছে। দলটির হাইকমান্ড বেগম রওশন এরশাদ তাকিয়ে আছে সরকারি দলের পদক্ষেপের দিকে। কারণ বেগম রওশন এরশাদের স্পষ্ট ঘোষণা বিএনপির সঙ্গে তিনি জোট করবে না। আওয়ামী লীগের সাথে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। ফলে সরকারি দলের সিন্ধান্তের ওপরই নির্ভর করবে দলটির আগামী দিনের পথচলার সিদ্ধান্ত।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টদের মতে, বেগম রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থা এমনিতেই খারাপ। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। সম্প্রতি বছর ব্যাপী থাইল্যান্ডে চিকিৎসা করে তিনে দেশে ফিরেছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তার আবারও থাইল্যান্ডে যাওয়ার কথা রয়েছে। রাজনৈতিক কার্যক্রমে সরাসরি তিনি অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এমনকি জাতীয় সংসদের অধিবেশনেও নিয়মিত অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। ফলে দ্বাদশ নির্বাচনই তার জীবনের শেষ নির্বাচন বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।

সূত্রটি জানায়, বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টিকে পুনর্গঠন করার জন্য এরইমধ্যে ৪৩টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি করে। তবে কমিটিগুলো সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে দূরে সরে রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, এ সব কমিটি করার ক্ষেত্রে বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে। কমিটির নাম এবং প্রেস রিলিজে নাম লেখার ক্ষেত্রে আগে পরে লেখা নিয়েও প্রতিদিনই হচ্ছে একে অপরের সঙ্গে তর্ক-বির্তক। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি চক্র মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে শুরু করেছে মনোনয়ন বাণিজ্য।

সিলেট বিভাগের সাধারণ সম্পাদক মহিবুল কাদির চৌধুরী কৌশল করে বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। তবে তা দৃশ্যমান নয়।’

কমিটি প্রদানের ক্ষেত্রে এবং মনোনয়ন বাণিজ্য করা হচ্ছে আপানাদের দলের মধ্যে এ অভিযোগ কতটুকু সত্য? জবাবে তিনি বলেন, ‘কমিটি প্রদানের ক্ষেত্রে এবং মনোনয়ন প্রদানে বাণিজ্য হচ্ছে কি না তা আমার জানা নেই। তবে আমি ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলেছি, মৌলভীবাজার ৪ অথবা ২ আসনের যেখান থেকে আমাকে মনোনয়ন দেবে আমি নির্বাচন করব।’

কক্সবাজার-২ আসন মহেষখালী কুতুবদিয়া জাপা নেতা শহিদুল ইসলাম মুন্না জানান, আমি ২০১৪ সালে কনফার্ম এমপি হয়ে যেতাম। ওই সময় জাপা প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এরশাদ সাহেব আমাকে প্রত্যাহার করতে বলেন। আমি প্রত্যাহার করেছিলাম। তবে ম্যাডাম বলেছিলেন, তুমি প্রত্যাহার করো না। কিন্তু আমি ম্যাডামের কথা রাখিনি। ফলে এমপি হতে পারিনি। তবে বেগম রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদের দুজনই আমাকে মাঠে থাকতে বলেছে। আমি মাঠে আছি। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে যে অংশ নির্বাচন করবে আমি সেদিকেই থাকব।

দলের মধ্যে মনোনয়ন বাণিজ্য হচ্ছে কিনা? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন বাণিজ্য হতেই পারে। বুর্জোয়া রাজনীতিতে এটি চলে আসছে।’

দলটির অপর এক নেতা জানান, দলের সদস্য সচিবের নেতৃত্বের প্রতি কারও আস্থা নেই। তার কারণেই মূল দল থেকে হেভিওয়েট অনেক নেতা আসতে চায় না। ওই সব হেভিওয়েট নেতারা বলেছে, ‘ম্যাডামের নেতৃত্বে রাজনীতি করা যায়। কিন্তু গোলাম মসীহর নেতৃত্বে রাজনীতি করা যায় না।’

এ সব প্রসঙ্গে বেগম রওশন এরশাদ (জাপার) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব গোলাম মসীহ বলেন, ‘আমরা সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকব। বিএনপির সঙ্গে আমরা নির্বাচনি কোনো জোট করব না। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে চুপচাপ রয়েছি। রাজনীতি মেরুকরণ কী হয় সেদিকে খেয়াল রাখছি। এ ছাড়া আমরা সরকারি দলের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে নির্বাচনি প্রস্তুতি নেব।’

আপনাদের দলের জেলা কমিটি প্রদানের ক্ষেত্রে এবং আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদানের জন্য বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এমন অভিযোগ উঠেছে দলের মধ্যে এ সর্ম্পকে আপনার মন্তব্য কী? জবাবে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন বাণিজ্য হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই। তবে কমিটি দেওয়ার বেলায় কোনো অনিয়ম হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’

গোলাম মসীহ বলেন, ‘আমি জানি জি এম কাদের এরইমধ্যে ৫৩ জনকে মনোনয়ন দিয়েছেন। সেখানে বাণিজ্য হয়েছে। এ ছাড়া ১০৩ জনের একটি তালিকা হয়েছে সেখানেও মনোনয়ন বাণিজ্য হচ্ছে।’ তবে রওশন গ্রুপের কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা শুনেছি সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি পদ পাইয়ে দেওয়ার জন্য টাকা নিয়েছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার জন্য অনেককে আনা হয়েছে। এখানেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে। এ সব সময়মতো প্রকাশ করা হবে।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

জাতীয় পার্টি জাপা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর