মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী কেন জামুকার চেয়ারম্যান, হাইকোর্টের রুল
২৩ মে ২০২৩ ১৪:৩০
ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান হওয়ার বিধান নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে রিট আবেদনকারী নওয়াব আলী মন্ডলের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া তার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মানী ভাতা অব্যাহত রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বগুড়ার গাবতলীর বীর মুক্তিযোদ্ধা নওয়াব আলী মন্ডলের দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (২২ মে) রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদেশের বিষয়টি আজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু।
রুলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান হওয়ার বিধান কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পদাধিকার বলে সদস্য হওয়া সংক্রান্ত আইনের বিধান কেন বাতিল করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
আইন সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী অনিক হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সেলিম আজাদ।
পরে আইনজীবী তৌফিক ইনাম বলেন, বগুড়ার গাবতলীর বীর মুক্তিযোদ্ধা নওয়াব আলী মন্ডল ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন তিনি অস্ত্র লুট করে সম্মুখ সমরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যা যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর গৌরবগাঁথা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের প্রকাশিত বইয়েও স্থান পায়। বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার ২০০৫ সালে তাকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করেন এবং ওই বছরেই তার নাম গেজেটভুক্ত হয়। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত সম্মানী ভাতাও পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর জামুকার ৮১তম সভায় তার গেজেটটি বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশ অনুসারে মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি নওয়াব আলী মন্ডলের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এরপর নওয়াব আলী মন্ডল মন্ত্রণালয়ের গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপন, ভাতা বন্ধ ও জামুকার চেয়ারম্যান হিসেবে মন্ত্রী এবং সদস্য হিসাবে সচিবের নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের সংশ্লিষ্ট বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ১০ মে রিট দায়ের করেন।
আইনজীবী তৌফিক ইমাম আদালতে বলেন- জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ২০২২ সালের আইন দ্বারা গঠিত একটি পৃথক সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। এই আইনের ৫(১) (ক) ৫ (১) (খ) ধারা অনুসারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও সচিব পদাধিকার বলে যথাক্রমে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)’র চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং মন্ত্রণালয়ে যদি প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকেন, সেক্ষেত্রে তারা পদাধিকার বলে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
জামুকা আইন ২০২২ এর ৬ ধারা অনুসারে জামুকার অন্যতম প্রধান কাজ হলো- গেজেটভুক্ত কোন মুক্তিযোদ্ধা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয় মর্মে তদন্তে আসলে তার গেজেটটি বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবরে ‘সুপারিশ’ করা এবং নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সুপারিশ করা।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং সচিব একইসঙ্গে জানুকার সর্বোচ্চ পদে আসীন, ফলে তারা জামুকার নির্বাহী প্রধান হিসেবে যে সুপারিশ প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব হিসেবে সেটাই “মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত” হিসেবে প্রকাশ করে। তাছাড়া জামুকা যখন একজন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয় বরাবরে সুপারিশ করে মন্ত্রণালয় কিন্তু গেজেট বাতিলের আগে তাকে কোনো ধরনের অভিযোগ খন্ডানোর বা শুনানির সুযোগও দেয় না, শুধুমাত্র জামুকার সুপারিশ মোতাবেক গেজেট বাতিল কর প্রজ্ঞাপন জারি করে। জামুকা আইনের ৮ ধারা অনুসারে জামুকার চেয়ারম্যান অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জামুকার সকল নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী, অন্যদিকে মন্ত্রণালয়েরও প্রধান তিনি। সে কারণে প্রকৃত অর্থে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একই প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে তদন্তকারী এবং বিচারক একই ব্যক্তি। এটা প্রতিষ্ঠিত ন্যায়বিচার নীতির পরিপন্থী। ফলশ্রুতিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি, মর্যাদা ও সম্মানী মন্ত্রীর একক ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এসব কারণেই রিটটি দায়ের করা হয়। আজ শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করেছেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ