‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সংবাদ সরকারের কৌশল’
২৩ মে ২০২৩ ১৪:২৬
ঢাকা: বৃহত্তর যুগপথ কর্মসুচি দিয়ে বর্তমান ভোট চোর সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা মাহামুদুর রহমান মান্না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে— সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদনর বিষয়ে তিনি বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলনকে অন্যদিকে প্রভাবিত করার জন্য এই প্রতিবেদন করানো হয়েছে, যা সরকারের কৌশল।
মঙ্গলবার (২৩ মে) গণতন্ত্র মঞ্চ পূর্ব ঘোষিত পদযাত্রার আগে জাতীয় প্রেসক্লবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মাহামুদুর রহমান মান্না এ কথা বলেন। অবৈধ্য সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বতী সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এই পদযাত্রা হয়। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে পুরান ঢাকা বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত গিয়ে শেষ করে। সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন— বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।
মাহামুদর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। এরপর কিভাবে নির্বাচন হবে তা নিয়ে আলোচনা হবে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত এবং জনগণের প্রতিনিধিত্ব সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের পদক্ষেপ নিয়ে তারপর এদেশে নির্বাচন হবে। কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি সরকারি পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে আমেরিকা থেকে আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে। প্রতিবেদনটি ছাপানোর পর বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছে। আসলে এ রিপোর্ট বিরোধী দলের আন্দোলনকে অন্যদিকে প্রভাবিত করার জন্য করানো হয়েছে। কারণ কোনো রাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে তার আগে সেই দেশের প্রতি নোটিশ করে। তারপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। এই রিপোর্টটি হচ্ছে সরকারের চালাকি এবং কৌশল।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বিরোধী দলের আন্দোলনকে অন্যদিকে প্রভাবিত এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আরেকটি তামাশার নির্বাচন করতে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করবে। সরকারের সেই কৌশলে জনগণ আর পড়তে চায় না। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তাই অচিরেই বৃহত্তর যুগথ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে সরকারকে বিদায় দিতে হবে।’
সাইফুল হক বলেন, ‘জনগণ যাতে আন্দোলন করার জন্য রাজপথে না নামে সেজন্য পুলিশ দিয়ে জনগণের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে।’
শেখ রফিখুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘জনগণের আন্দোলনকে ভয় পেয়ে সরকার বিরোধীদলের আন্দোলনকে প্রতিরোধ করার হুমকি দিচ্ছে। সরকার দেশ পরিচালনায় পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দেশের কোটি কোটি মানুষ চরম কষ্টে দিন পার করছে। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে সরকার দেশকে বহুমুখী বিপদে ফেলে দিয়েছে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকলে দেশের সার্বভৌমত্ব আরও হুমকির মুখে পড়বে। তারা দেশকে বহুমুখী বিপদে ফেলে দিয়েছে। দেশকে অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘাত-সংঘর্ষের পথে ঠেলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে আজ তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় গণআন্দোলন-গণসংগ্রামের পথে এই অবৈধ সরকারকে বিদায় দিতে না পারলে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করা যাবে না। ভোটের অধিকার, অবাধ নির্বাচন, রাষ্ট্র, প্রশাসন ও সংবিধানের জরুরি সংস্কার ছাড়া কোনো দাবিই অর্জন করা যাবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণতন্ত্র মঞ্চ বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসান ও চরম অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের ডাক দিয়েছে।’
সমাবেশে একটি লিফলেট বিলি করা হয়। সেখানে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত নেতা কর্মীদের সাজাবাতিল, সকল হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪’সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সকল নির্যাতনমূলক কালাকানুন বাতিল এবং গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি করা হয়। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যপণ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও পানিসহ জরুরি সেবা নিয়ে স্বেচ্ছাচারীতা বন্ধ করা, শ্রমিকদের বাঁচার মতো মজুরি নির্ধারণ এবং কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবি করা হয়।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস