Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিতু হত্যা : মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্য শেষ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ মে ২০২৩ ১৯:২২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনকে জেরা শেষ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এর মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এ মামলার প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো।

মঙ্গলবার (২৩ মে) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষী মোশাররফ হোসেনের শেষদিনের জেরা সম্পন্ন হয়।

জেরার শেষদিনে মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা এজাহার যেটি পরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে নিষ্পত্তি করা হয় সেটি এবং তদন্ত সংস্থার জব্দ আলামত আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এর ওপর জেরায় বাবুলের আইনজীবী দাবি করেন, মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা এজাহারটি তার হাতের লেখা নয়। এটি যারা লিখেছে তারা বাবুল আক্তারের শত্রুপক্ষ। তারা বাবুলকে টার্গেট করেতে উনাকে ব্যবহার করেছে।

বাবুলের আইনজীবী আরও দাবি করেন, জব্দ তালিকায় মিতুর হাতের লেখা যে চারটি পাতা দেওয়া হয়েছে সেখানে যেসব লেখা আছে ওসব একজন ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার শিট। ইংরেজিতে লেখা ওসব বাক্যতে শব্দের মাঝে শিক্ষকের কারেকশন করা বাংলা অর্থ পেন্সিল দিয়ে লিখে দেওয়া আছে। ওগুলো কোনো অনুশীলন খাতা থেকে ছিড়ে নেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পিপি আব্দুর রশীদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর আদালত ১১ জুন পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি রেখেছেন। সেদিন সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষে ১০ জনের তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে জেরায় বাবুলের আইনজীবী দাবি করেন, জব্দ করা আলামতে দুইটি বই ‘তালেবান ও বেস্ট ক্যাপ সিক্রেট’ আগে কেউ পড়েনি। বইটির মলাটের প্রথম ও তৃতীয় পাতায় যেসব বাক্য লেখা আছে ওগুলো বাবুল আক্তারের ওই বান্ধবীর (আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরিজীবী) হাতের লেখা নয়। ওগুলো পিবিআইয়ের সৃষ্টি।

বিজ্ঞাপন

জবাবে মোশাররফ হোসেন এসব কথা সত্য নয় দাবি করে বলেন, ‘বইয়ে যেসব লেখা রয়েছে তা ওই বান্ধবীর।’

তখন বাবুল আক্তারের আইনজীবী তার সামনে ‘তালেবান’ বইয়ের প্রথম ও তৃতীয় পাতা দেখিয়ে একটির সঙ্গে অন্যটির লেখার মিল নেই বলে দাবি করেন।

জবাবে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে দুইটি লেখায় মিল আছে।’

বাবুল আক্তারের আইনজীবী আরও দাবি করেন, ওই দুইটি বইয়ে বাবুল আক্তারের ওই বান্ধবীর নাম ছাড়া তার কোনো পরিচয়, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি, ফ্যাক্স নম্বর ও ফেসবুক আইডি কিছুই লেখা ছিল না। ওই বান্ধবীর সম্পূর্ণ ঠিকানাও মোশাররফ হোসেন জানেন না। তিনি এসব না জেনেই অন্যর প্রস্তুত করা এজাহারে স্বাক্ষর করেছেন।

আদালত তখন বলেন, ‘আমরা কেনো মেটেরিয়েল এক্সিবিটের সময় ওই বান্ধবীর ব্যাপারে প্রশ্ন করব? আমি আর এগুলো নিতে চাচ্ছি না। উনার পরিচয়ের বিষয়ে আর কিছু না বললে ভালো হয়। আমি নেব না।’

আইনজীবী কফিল উদ্দিন দাবি করেন, জব্দ করা তালিকায় যে ২৯ টি মেসেজের কথা বলা হয়েছে সেখানে কোনো তারিখ উল্লেখ নেই। সেখানে পৃষ্ঠার ওপর যে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত লেখা আছে, সেটা মোশাররফ হোসেনের হাতের লেখা।

জবাবে মোশাররফ হোসেন লেখাগুলো তার নিজের হাতের স্বীকার করলেও তারিখগুলো মিতুর বক্তব্য অনুযায়ী তিনি লিখেছেন বলে দাবি করেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ সপ্তাহে মিতু তাকে ওসব জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে বাবুল আক্তারের করা এজাহার ভুল দাবি করে সেটা তাকে অস্বীকার করার দাবি জানান মোশাররফ হোসেনের আইনজীবী আবু হেনা।

তখন আদালত বলেন, ‘এই এজাহার স্বীকৃত। কারণ সেখানে বাবুল আক্তারের স্বাক্ষর আছে।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাত জনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১০ অক্টোবর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ১৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ৯ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয়েছে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে। অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া। এতে মুসা ও কালুকে পলাতক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সারাবাংলা/আইসি/একে

এসপি বাবুল মিতু হত্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর