Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ, অনুসন্ধানের নির্দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৪ মে ২০২৩ ১৮:২০

ঢাকা: একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে এবি ব্যাংকের ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ অনুসন্ধান করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ওই ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তিন মাসের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া দুদক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব, বিএফআইইউ, সিআইডি, এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বুধবার (২৪ মে) দৈনিক সমকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টে বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদেশের আগে স্বপ্রণোদিত রুল ও নির্দেশনার বিরোধিতা করেন আদালতে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম। আইনজীবী মাহবুব শফিক ও মইনুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম।

পরে আদেশের বিষয়ে আইনজীবী মাহবুব শফিক বলেন, ‘একই ব্যক্তি তথ্য গোপন করে আরও পাঁচটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। তবে আমরা চেয়েছিলাম এ বিষয়ে এবি ব্যাংক ইন্টারনাল রিপোর্ট দেওয়ার পর আদালত রুল দিক। এখানে এবি ব্যাংক একটা জবাব দিলে সেটি যাচাই করা যেত।’

বিজ্ঞাপন

আজ (২৪ মে) ‘খেলাপির তথ্য লুকিয়ে আরও বড় জালিয়াতি’ শিরোনামে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে রাতে ঋণের টাকা তুলে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী হায়দার রতন। সম্প্রতি একটি ভুয়া কোম্পানির অনুকূলে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেছে এবি ব্যাংক, যার সুবিধাভোগী সেই ব্যবসায়ী রতন। জালিয়াতির এই ঋণের তথ্য জানতে পেরে এরই মধ্যে তা আটকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদনের বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলী হায়দার রতনের নামে পাঁচ ব্যাংকে বর্তমানে ৫৫৯ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি কাজের কার্যাদেশের বিপরীতে সন্দেহজনক উপায়ে নেওয়া এসব ঋণ এখন খেলাপি।

বিএফআইইউর পরিদর্শনে উঠে এসেছে, ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিংয়ের নামে একটি নামসর্বস্ব কোম্পানির নামে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ সম্প্রতি অনুমোদন করে এবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। গত ১০ জানুয়ারি ব্যাংকটির গুলশান শাখায় ঋণের আবেদন আসে। আবেদনে প্রতিষ্ঠানটির মালিক দেখানো হয় মোহাম্মদ আতাউর রহমান ও মো. মামুন রশিদকে। তবে এর ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রতনের মালিকানাধীন ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশনের, যার কার্যালয় ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে। আর আবেদনপত্রের প্যাডে যে ই-মেইল ও ওয়েবসাইট ব্যবহার করা হয়েছে তাও তারই মালিকানার ব্র্যান্ডউইন নামে আরেকটি কোম্পানির। এ কোম্পানির নামে দ্রুত ছাড় করতে আবেদনের দিনই এবি ব্যাংকের গুলশান শাখা ব্যবস্থাপকসহ তিন কর্মকর্তা গ্রাহকের ধানমন্ডির অফিস ও বাড়ির ঠিকানা পরিদর্শন করে একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন দেন। গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের নামে কখনো কোনো আমদানি না হলেও ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহক প্রচুর পরিমাণে জ্বালানি, নির্মাণসামগ্রী, রাসায়নিক পদার্থ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানি করেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আমদানি তো দূরে থাক, কোম্পানিটির নিবন্ধন নেওয়া হয় গত জুনে। এরপর গত নভেম্বরে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে এবি ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি হিসাব খোলা হয়। এর বাইরে কোনো লেনদেনও নেই। অথচ ভুয়া পরিদর্শন প্রতিবেদন দিয়ে একেবারে নতুন নিবন্ধিত কোম্পানিকে বড় কোম্পানি দেখানো হয়। পরদিন ঋণপ্রস্তাবটি শাখা থেকে প্রধান কার্যালয়ের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটিতে পাঠানো হয়। আবেদনের এক মাস পর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের ৭৫৫তম পর্ষদ সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জোর চেষ্টায় তা অনুমোদন হয়। আবার ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিংয়ের নামে ঋণ অনুমোদন হলেও সব ধরনের ব্যাংকিং রীতিনীতি অমান্য করে ইনফ্রাটেকের অনুকূলে ১৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার গ্যারান্টি ইস্যু করে ব্যাংক। এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল সমকালকে বলেন, ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিং আলী হায়দার রতনের কোনো বেনামি কোম্পানি নয়, বরং রতনের মালিকানার ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে ব্র্যান্ডশেয়ারের কনসোর্টিয়াম রয়েছে। যে কারণে ব্র্যান্ডশেয়ারের নামে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন হলেও ইনফ্রাটেকের নামে ১৬ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি ইস্যু করে ব্যাংক। বিষয়টি নিয়ে বিএফআইইউ আপত্তি জানানোর পরই ব্র্যান্ডশেয়ারের ঋণ ছাড় বন্ধ রেখে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। এছাড়া ইনফ্রাটেকের নামে যে ব্যাংক গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়েছে, শিগগিরই তা কলব্যাক তথা ফেরত আনা হবে।

তিনি বলেন, কোনো জায়গা থেকে সুবিধা নিয়ে কিছু করার ব্যক্তি তিনি নন। ব্যাংকটি একসময় বিএনপি নেতার মালিকানাধীন ছিল। সরকারের পক্ষ হয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে গিয়ে তার অনেক শত্রু তৈরি হয়েছে। তাদের কেউ তার নামে বদনাম ছড়াতে পারে।

সারাবাংলা/কেএফ/এনএস

টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর