৪৫০ কেন্দ্রে আজমতের চেয়ে ২০ হাজার ৩৪ ভোটে এগিয়ে জায়েদা
২৬ মে ২০২৩ ০০:০৮
ঢাকা: গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে মোট ৪৮০ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে বেসকারিভাবে ৪৫০ কেন্দ্রের ফলাফল জানা গেছে। ওই ৪৫০ কেন্দ্রের ফলাফলে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা মোট ভোট পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯টি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী টেবিল ঘড়ি মার্কায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ টি ভোট।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লার চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ৪৫০ কেন্দ্রে ২০ হাজার ৩৪ ভোট বেশি পেয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৪টায় শেষ হয় ভোটগ্রহণ।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে টঙ্গীর আরিচপুর মসজিদ রোডের দারুস সালাম মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান।
ভোটদান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসা থেকে আমি বলতে পারি, জয়-পরাজয় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আমি বিশ্বাস করি, ফয়সালা আসমান থেকে হয়। আল্লাহ যা চান তা জনগণের মাধ্যমে প্রকাশ করবেন।’
সকাল ১০টার পর কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। ওই সময় তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমও ভোট দেন।
ভোট দেওয়ার পর জায়েদা খাতুন বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে তার এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ভালো, সুষ্ঠু ভোট হলে নির্বাচনী ফলাফল যাই হোক তা মেনে নেব।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন থেকে গাজীপুর সিটির ভোট সিসিটিভিতে মনিটরিং করে দুজনকে আটকের নির্দেশনা দেয় ইসি।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যেসব প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন তারা সবাই বলেছেন নির্বাচন ব্যবস্থায় তারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। নির্বাচনে যে ফলই আসুক না কেন তারা সবাই মেনে নেবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৫০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে।’
ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী আইনে আছে যে, নির্বাচনের শেষ সময় পর্যন্ত যদি ভোটার উপস্থিতি থাকে, তাহলে ভোটারের ভোট না নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ব্যালটের ক্ষেত্রে যে নিয়ম ইভিএমের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। আমরা আশা করছি, ৫০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। তবে মোট হিসাব করলে সঠিক তথ্যটা পাওয়া যাবে।’
ভোটের রেজাল্ট ঘোষণার সময় বেশ দ্রুতই ১৩৩ ভোটের ফল ঘোষিত হয়। এরপর কিছুটা বিলম্ব দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে জায়েদা খাতুনের ছেলে গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দিনে ভোট হয়েছে, দিনে রেজাল্ট নিয়ে যেতে চাই। আমি সব সেন্টারে খবর নিয়েছি; আমার মা জিতে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি রিটার্নিং অফিসারের অফিসে গিয়েছিলাম, কেন সে দেরি করতেছে? তাড়াতাড়ি যেন রেজাল্টটা দিয়ে দেয়। আমার রেজাল্ট যদি সঠিকভাবে এখানে না দেওয়া হয়। তাদের কাছে যে রেজাল্ট শিট আছে সেটি যদি এখানে প্রয়োগ না করা হয় তাহলে তো বুঝতেই পারছেন এখানে কী হচ্ছে?’
জাহাঙ্গীর আলম এ সময় অভিযোগ করেন ভোটের ফলাফল ঘুরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে গাজীপুরের মেয়র হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু মেয়র থাকাকালেই বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে তাকে দলীয় পদ হারাতে হয়। তবে নির্বাচনের আগে দল থেকে ক্ষমা পান।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় জাহাঙ্গীরকে আবারও বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। ঋণ খেলাপির অভিযোগে নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করে। হাইকোর্টে গিয়েও প্রার্থিতা ফেরত পাননি জাহাঙ্গীর।
নিজের সঙ্গে মায়ের জন্যও স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। মা জায়েদা খাতুনের প্রার্থিতা টিকে যাওয়ায় নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম মায়ের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন— নৌকা প্রতীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. আজমত উল্লা খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ।
এছাড়াও স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা), ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনূর ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন প্রার্থী এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, নারী ভোটার পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন। এছাড়াও ১৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।
সারাবাংলা/জিএস/একে
আওয়ামী লীগ গাজীপুর সিটি নির্বাচন গাসিক নৌকা স্বতন্ত্র প্রার্থী