প্রধান ২ জোটে ঝুঁকে ২ গ্রুপ, আরেক অংশ সিদ্ধান্তহীনতায়
২৭ মে ২০২৩ ১৮:৩৩
ঢাকা: নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বিভিন্ন জোট ও দল চাঙ্গা হচ্ছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে কেন্দ্র করেই মূলত বিভিন্ন জোট, উপজোট ও দল এখন মাঠে সক্রিয়। এমনকি জাতীয় সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টিও আসন সমীকরণে নির্বাচনি জোটে যেতে ইচ্ছুক। তবে জোটে যাওয়া নিয়ে এবারও তাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনি জোটে যাবে তা নিয়ে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ও কো-চেয়ারম্যান এবং দলীয় সংসদ সদস্যদের একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। অপর একটি অংশ জিএম কাদেরের নেতৃত্বে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনি জোট করতে চায়। এছাড়া জাপার আরেকটি অংশ দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। তারা দু’গ্রুপের সঙ্গেই সুসর্ম্পক রেখে চলছে। দিনে তারা জিএম কাদেরের সঙ্গে, আর রাতে সরকারি দলের লবিং ও রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। তবে এ নিয়ে দলের অনেক নেতাকর্মী মুখ খুলতে চাইছেন না। কারণ, এই মুহূর্তে তারা প্রকাশ্যে এলে দলীয় মনোনয়নসহ সাংগঠনিক পদ-পদবি হারাতে পারেন। জাপার একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সম্প্রতি প্রেসিডিয়াম ও দলীয় সংসদ সদস্য এবং নেতা-কর্মীদের নিয়ে পৃথক বৈঠক করেছেন। ওইসব বৈঠকে বর্তমান রাজনীতি পর্যালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সরকার যদি নিজেদের অধীনে নির্বাচন করে তবে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে।’ তবে এক্ষেত্রে বিএনপির কোনো অংশ নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টির অবস্থান কি হবে?— এমন প্রশ্নের জবাবে সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টিকে বিরোধীদলের আসন থেকে সরে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে ভিন্ন রাজনৈতিক কৌশল নিয়েও ভাবছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির ঢাকা মহানগরের নেতা এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে, আর সেই নির্বাচনে অংশ নিলে রাজধানী ঢাকার কোনো আসনেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হতে পারবে না। আবার বিএনপির সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নিলে জাপাকে ঢাকা মহানগরের কোনো আসন ছেড়ে দেবে না দলটি। আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলে কাজী ফিরোজ রশিদ এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং গুলশান-বনানীর আসন ছাড় দিতে পারে। কেননা ২০১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচনে ওইসব আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। এছাড়া দলের চেয়ারম্যানসহ হেভিওয়েট নেতাদের নিজ নিজ নির্বাচনি আসনের অবস্থা খুই খারাপ।’
ওই নেতার মতে, ‘জাপায় কিছু নেতা আছেন যারা শুধু নির্বাচন করেন সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য। ফলে জাপার এককভাবে নির্বাচন করার কোনো অবস্থান নেই। ফলে জোট করেই নির্বাচনে যেতে হবে। এ সব বিষয় নিয়ে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং অতিরিক্ত মহাসচিব সাইদুর রহমান টেপা সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। কে জিতবে বা জিতবে না সেটি নির্বাচনের সময় দেখা যাবে। সুষ্ঠু, অবাদ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, কে সরকার গঠন করবে কে প্রধান বিরোধীদল হবে, সেটিও তখন স্পষ্ট হবে। এই মুহূর্তে এসব নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ১৯৯০ সালের পর বাংলাদেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে তা কেউ ধারণা করতে পারেনি। সেই জাপা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে ট্রাম কার্ড। এখনো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ দল জাপা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না তা এখনো অনিশ্চিত। তারপরও যদি বিএনপির ব্যানারে কেউ নির্বাচনে অংশ নেয়, আর সেই দলই যে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হবে তা মনে করি না। জাতীয় পার্টি এবারের নির্বাচনে খুবই সর্তক ও কৌশলী হয়ে সামনে এগিয়ে যাবে। জাপা নির্বাচেনর জন্য প্রস্তুত আছে। আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার ক্ষমতা রাখি।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস/পিটিএম