খানজাহান আলীর দীঘিতে মা কুমির ডিম পেড়েছে ৫৮টি
২৭ মে ২০২৩ ১৭:৫০
বাগেরহাট: বাগেরহাটের হজরত খানজাহান আলী (রহ.) দীঘিতে থাকা মিঠাপানির মা কুমির প্রায় ৫৮টি ডিম পেড়েছে। এবারও এই ডিম থেকে বাচ্ছা ফুটবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এর আগে অনেকবার এই মা কুমির ডিম পাড়লেও, কোনো বাচ্চা ফোটেনি। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার নিয়ে মাজারের ফকিরদের মধ্যে বিষয় তেমন কোনো আগ্রহ নেই। বারবার ডিম দিলেও বাচ্চা না ফোটার কারণ অনুসন্ধানে নেই কোনো উদ্যোগ। এভাবে বাচ্চা না হলে কুমিরের বংশ বাড়বে না। মাজারের দীঘি থেকে মিঠাপানির কুমির হারিয়ে যাবে। ফলে মাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন ভক্তরা।
খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে সুলতানী শাসন আমলে হজরত খানজাহান আলী (রহ.) বাগেরহাটে ‘খলিফাতাবাদ’ নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় তিনি ৩৬০টি দীঘি খনন করেন। এর মধ্যে সব থেকে বড় ‘ঠাকুর দীঘি’ আয়তন ৩৬০ একর। এই দীঘির পাড়ে তার সমাধি রয়েছে। এই দীঘিতে তিনি দুইটি মিঠাপানির প্রজাতির কুমির এনেছিলেন। যাদের নাম ছিল ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’। খানজাহান (রহ.) -এর মৃত্যুর পর মাজারের খাদেম ও ভক্তরা ওই কুমির ২টিকে নিয়মিত দেখভাল করতেন। ওই কুমির যুগলের বংশ বিস্তার করে আসছিল।এক পর্যায় এই দীঘির কুমির মারা যেতে যেতে শেষে মাত্র ২টি কুমির ছিল।
মাজারের দীঘিতে মিঠাপানির কুমিরের বংশ বিস্তারের জন্য ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ থেকে ছয়টি কুমির এনে এখানে ছাড়া হয়। মাদ্রাজি কুমির হিংস্র প্রকৃতির ছিল। তাদের মারামারির কারণে ‘কালাপাহাড়’ অসুস্থ হয়ে পড়ে ২০০৬ সালে কুমিরটি মারা যায় এবং ২০১৫ সালে কুমির ‘ধলা পাহাড়’ এর মৃত্যু হয়। এর মধ্য দিয়ে খানজাহান আলী (রহ.) -এর আমলের কুমির যুগের সমাপ্তি ঘটে।
মাদ্রাজ থেকে আনা ৬টি কুমিরের ৪টি কুমির মারা যায়। বর্তমানে মাজারের দীঘিতে দুইটি কুমির রয়েছে। এই কুমির ডিম প্রতি বছর ডিম দিলেও তা থেকে বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না।
খানজাহান আলী (রহঃ) মাজারের খাদেম বিনা ফকির বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে মা কুমির প্রায় ৫৮টি ডিম পেড়েছে। তবে ডিম গুলো কবে পেড়েছে তা তিনি বলতে পারেন না। কয়েকদিন হলো ডিমগুলো আমাদের চোখে পড়েছে ‘
মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন,‘ কুমিরটি দীঘির পূর্ব পাড়ে ডিম পেড়েছে। এই নিয়ে অনেকবার এই মা কুমিরটি ডিম পেড়েছে। কিন্তু কখনও বাচ্চা হয়নি।’
বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দফতর মূলত গৃহপালিত প্রাণী নিয়ে কাজ করে । তাই খানজাহান আলী (রহ.) মাজারের কুমিরের ডিম থেকে কেন বাচ্চা হচ্ছে না সে বিষয়ে বলতে পারছি না।’
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, করমজলের কুরিরের বেলায়ও এমন সমস্যা দেখা দিয়েছিল । পরে কুমির পরিবর্তন করে দেওয়ায় আবার এখানে বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘খানজাহান আলী (রহ.) মাজারের কুমিরের বয়সের কারণে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় দীঘিতে থাকা মিঠাপানির কুমির দু’টি বার বার ডিম দিলেও কোনো বাচ্চা হচ্ছে না। এছাড়া সেখানে থাকা কুমিরদের খাবারের বিষয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মাজারে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীরা খাবার হিসেবে যে যার মতো চর্বিযুক্ত মাংস দেন। ফলে কুমির দুইটির পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেছে। ডিম থেকে বাচ্চা না হওয়ার এটিও একটি কারণ। তবে নতুন করে অল্প বয়সী দুইটি নারী-পুরুষ কুমির দীঘিতে ছাড়তে পারলে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সারাবাংলা/একে