‘অশান্তি-সংঘাত না, আমরা চাই মানুষের উন্নতি’
২৮ মে ২০২৩ ১৩:২৫
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি জানি যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে, যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি; প্রতিনিয়ত তাদের প্রতিবন্ধকতা আমাদের অতক্রিম করতে হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন জনগণই শক্তি, জনগণই ক্ষমতার উৎস। আমি সেই বিশ্বাসে বিশ্বাসী, সেই বিশ্বাস নিয়েই আমার পথচলা। জাতির পিতার শান্তির বাণী শুনিয়েছেন, কিন্তু তাকেও নিজের জীবন দিতে হয়েছে কিছু অমানুষের হাতে। আমরা চাই না অশান্তি-সংঘাত; আমরা চাই মানুষের জীবনের উন্নতি।’
রোববার (২৮ মে) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি শান্তি পদকপ্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জাতির পিতা বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাস করতেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কি দুভার্গ্য আমাদের। যিনি শান্তির কথা বলে গেছেন তাকেই জীবনটা দিতে হল যে দেশের মানুষকে তিনি গভীর ভাবে ভালবেছিলেন; সেই মানুষেরই কিছু অমানুষের হাতে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। আমরা চাই তার এই দেশটি গড়ে উঠকু উন্নত সমৃদ্ধ হয়ে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন জনগণই শক্তি, জনগণেই ক্ষমতার উৎস। আমি সেই বিশ্বাসে বিশ্বাসী। আর সেই বিশ্বাস নিয়েই আমার পথচলা।’
বাংলাদেশ আজকে সারাবিশ্বে শান্তি রক্ষায় অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ এখন এক নাম্বার সদস্য দেশ হিসাবে সারাবিশ্বের শান্তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে বলেও অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে কাজ করতে গিয়ে যারা জীবন দিয়েছে তাদের অবদানের কথাও স্মরণ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমরা সব সময় শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করতে চাই। যেখানে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ ছিল, আজকে তা ১৮.৭ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যেখানে আমাদের হতদরিদ্র ছিল সেটা এখন আমরা ২৫.৯ ভাগ, সেটা আমরা ৫.৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাআল্লাহ এদেশে কোনো মানুষ হতদিরদ্র থাকবে না, গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষ অন্তত তাদের মৌলিক অধিকার পাবে। এটা জাতির পিতার লক্ষ্য, সে লক্ষ্য আমরা বাস্তবায়ন করে যাব।’
আজ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পিছনে রয়েছে অব্যাহত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারণ একথা সকলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ১৯৭৫’ এ ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর একের পর এক দেশে ক্যু হয়। সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়। সামরিক অফিসার, বিমান বাহিনীর অফিসার এবং মুক্তিযোদ্ধা; কত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের হত্যা করে গুম করা হয়। একটা অশান্ত পরিবেশ। প্রতিরাতে কারফিউ। এই ধরনের একটা পরিবেশের মধ্য দিয়ে ২১টা বছর এদেশের মানুষকে কাটাতে হয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬ সালে সরকারে এসেছিলাম। সরকার তখন কিছু উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিলাম। অন্তত এইটুকু আমরা বলতে পারি, ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়েছিলাম। এরপর মাঝখানে আবার একটা অশান্ত পরিবেশ। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী চোখ হারিয়েছে, হাত হারিয়েছে, তাদের জীবন হারিয়েছে, সম্পদ হারিয়েছে; কত অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।’
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সরকার গঠন করে টানা মেয়াদে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে একটা শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজমান বলেই আজ বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা স্বাক্ষরতার হার বাড়াতে পেরেছি। মানুষের আয়ুষ্কাল বাড়াতে পেরেছি। মাতৃমৃত্যু হার কমাতে পেরেছি। মানুষ এখন আর ভিক্ষা করে চলবে না। নিজের মর্যাদা নিয়ে চলবে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
‘আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশকে আমরা উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তুলব, সে পরিকল্পনাও আমরা নিয়েছি ২০৪১ সালের মধ্যে। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে আমরা যথেষ্ট অগ্রগামী এবং এই অভিযাত্রা আমাদের অব্যাহত থাকবে; সেটাই আমাদের আজকে একমাত্র প্রতিজ্ঞা’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামে শান্তি পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাবনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, একটা প্রস্তাব এসেছে, শান্তি পুরস্কার আমাদের পক্ষ থেকে দেওয়ার। আমরা অবশ্যই এব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সারাবিশ্বে যারা শান্তির জন্য কাজ করবে, দেশের যারা শান্তির জন্য কাজ করবে তাদের অবশ্যই আমরা সম্মান দেব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শান্তি পুরস্কার এটা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা নেব। এইটুকু আমি বলতে পারিই কারণ আমরা শান্তি চাই এবং শান্তির পথেই আমরা এগিয়ে যাব।’
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তি পদকপ্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্মারক ডাক টিকিট ও খাম অবমুক্ত করা হয়। একইসঙ্গে একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গবেষক মোনায়েম সরকার। আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন- আনোয়ারা সৈয়দ হক, বিশ্ব শান্তি পরিষদের সভাপতি (বাংলাদেশ শাখা) সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
সারাবাংলা/এনআর/এমও