কয়লা সংকটে বন্ধের পথে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
২৮ মে ২০২৩ ২৩:৩০
ঢাকা: যতই দিন যাচ্ছে ততই কয়লা সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। কয়লার অভাবে বন্ধ হতে চলেছে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত ৫ মাস ধরে তিন দফা বন্ধ হয় রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখনো কয়লা সংকটে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদনে আসতে পারছে না রামপাল। এদিকে, সাময়িকভাবে বন্ধ হতে চলেছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা ফুরিয়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ইউনিটের একটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ইউনিটও বন্ধের উপক্রম।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা ডলার সংকট। ডলার সংকটের কারণে পর্যাপ্ত কয়লা আমদানি করা যাচ্ছে না। আর এই সংকট দ্রুতই কাটবে বলে মনে হচ্ছে না। স্বয়ং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলছেন, ‘ডলার সংকট কবে কাটবে তা বলা যাচ্ছে না।’ সেজন্য কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন নিয়ে সংশয় বাড়ছে।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) যৌথ উদ্যোগে পটুয়াখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড গঠিত হয়। সেই কোম্পানির আওতায় ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২০ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। গেল এক বছরে কয়লা সংকটের প্রভাব তেমন দেখা যায়নি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে ডলার সংকট দেখা দেওয়ায় কয়লা আমদানি কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদনে গেলে ১৩২০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট চালাতে প্রতিদিন দরকার হয় প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিকটন কয়লা। প্রতি মাসে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা কিনতে ঋণ দেয় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির চীনা অংশীদার সিএমসি। জানা গেছে, উৎপাদন শুরু থেকেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা কেনার দায়িত্ব ছিল সিএমসির। প্রতিষ্ঠানটি কয়লা কেনার জন্য টাকা দেয় এবং প্রতি ছয় মাস পর পর টাকা আদায় করে থাকে। কিন্তু গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে।
এদিকে, বকেয়ার টাকা না পরিশোধ না করলে সিএমসি নতুন করে কয়লা কেনার অর্থ দেবে না বলে জানান বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড-বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম খোরশেদুল আলম। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বকেয়া এখনি পরিশোধ সম্ভব নয়। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা কেনাও এই মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে যে ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা রয়েছে তা দিয়ে আগামী ৪/৫ দিনের বেশি আরেকটি ইউনিট চালানো সম্ভব হবে না।’
খোরশেদুল আলম বলেন, ‘মোট বকেয়ার ৬০ মিলিয়ন সিএমসিকে দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে আরও ১০০ মিলিয়ন দেওয়া হবে। তবে নতুন করে কয়লা পেতেও সময় লাগবে। ফলে জুনের প্রায় পুরোটা সময় প্ল্যন্ট বন্ধ থাকবে।’
অন্যদিকে, কয়লা সংকটের কারণে বন্ধের উপক্রম রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রও। দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতো। কয়লা সংকটের কারণে যদি দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিতে পারে। পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রতিদিন বিদ্যুতের গড় চাহিদা ১৩ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। কখনও এর চেয়ে বাড়ে, আবার কখনও খানিকটা কমে। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ১২ থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রামপাল ও পায়রার উৎপাদন সাময়িক বন্ধ হয়ে গেলে এর প্রভাবে লোডশেডিং বাড়বে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত সরকারও। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রোববার( ২৮ মে) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছি ডলার দেওয়ার জন্য। যাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অন্তত চালু রাখতে পারি। কিন্তু আমাদের কয়লা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে যে পরিমাণ ডলারের প্রয়োজন সে পরিমাণই দিতে হবে। এটা নিয়েই আমরা এখন সমস্যা মোকাবিলা করছি।’
উল্লেখ্য, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট হলেও প্রকৃত উৎপাদন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট। যা বরিশাল ছাড়া ঢাকায়ও সরবরাহ করা হতো।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম