করদাতাদের স্বস্তি দিতে ‘বাড়ছে’ করমুক্ত আয়সীমা
২৯ মে ২০২৩ ২১:৫৯
ঢাকা: করদাতাদের স্বস্তি দিতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়তে পারে। করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব রাখা হতে পারে। অর্থমন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেখানে এই প্রস্তাব থাকতে পারে। জানা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানো হচ্ছে। তবে এতে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ করদাতা করজালের বাইরে চলে যাবে বলেও আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এর আগে, ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন। এনবিআর আয়োজিত প্রাক বাজেট ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব আসে। করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয় এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দাকে সামনে রেখেই এবার আয়কর সীমা বাড়ানোর পক্ষে ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয় সীমা তিন লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরে যাদের আয় তিন লাখ টাকা, তাদের কোনো আয়কর দিতে হয় না। তিন লাখ টাকার বেশি থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ৫ শতাংশ হারে কর রয়েছে। ১০ লাখের বেশি থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১০ শতাংশ, ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ কর দিতে হয়।
নারী ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। প্রতিবন্ধী করদাতাদের জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়। এর আগে, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা হয়েছিল।
করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানো হলে অনেক করদাতা করজালের বাইরে চলে যাবে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের ট্যাক্স পেয়ার (করদাতা) বাড়াতে হবে। ব্যক্তিগত আয়কর সীমা বাড়ানো হলে অনেক মানুষ কর করজালের বাইরে চলে যাবে। বর্তমানে করমুক্ত আয় সীমা তিন লাখ টাকা। এটি আমাদের গড় আয় থেকে বেশি। এই সীমা আরও বাড়ানো হলে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ করজালের বাইরে চলে যাবে। দেশে আয় বৈষম্য রয়েছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে করমুক্ত আয়সীমা গড় আয়ের সমান থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গড় আয় ২৫০০ ডলার মানে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ বা চার লাখ টাকা করা হলে যে ২৭ লাখ লোক আগে আয়কর দিত, সেই সংখ্যাটি এখন তার চেয়ে আরও অনেক কমে যাবে। আয়কর থেকে সরকারের যে রাজস্ব আসে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও এনবিআরকে বেগ পোহাতে হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের। করমুক্ত আয়সীমা বাড়ুক। ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়লে অনেকেই করজাল থেকে বের হয়ে যাবে, এটি কোনো যুক্তি হতে পারে না। যারা ই-টিআইএন ধারী আছে, তাদের সবাই কি কর দেয়। তাদের বেশিরভাগ করজালের বাইরে থেকে যায়। তাদের কেন ধরে না এনবিআর? তাদের কাছ থেকে কেন কর আদায় করা হয় না?’
তিনি আরও বলেন, ‘আবার যারা এখনও আয়কর দেয় না, তাদের কেন করের আওতায় আনা হয় না? যারা করজালের বাইরে আছে তারা এমনিতেই বাইরে। রাজস্ব আদায়ের আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। সরকারের সেদিকেও মনযোগ দেওয়া উচিত।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম