২ বছরেও জানা যায়নি ডা. সাবিরা কেন খুন হয়েছিলেন
৩০ মে ২০২৩ ১১:১৩
ঢাকা: ২০২১ সালের ৩০ মে রাজধানীর কলাবাগান থেকে গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনার দু’দিন পরে সাবিরা ফুফাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে ঘটনার দুই বছর পার হলেও এখনও উদঘাটন হয়নি ডা. সাবিরার খুনের রহস্য। তবে শিগগিরই চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
সর্বশেষ গত ৩ মে মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই‘র পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এজন্য ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত আগামী ১ জুন প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। এ নিয়ে ১৯ দফা প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই‘র পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা জানান, ডা. সাবিরা কেন খুন হয়েছেন, তার কারণ এখনও জানা যায়নি। মামলার তদন্ত চলছে। সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বিষয়টি তদারকি করছে। তার স্বামীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল, অনেক তথ্য পেয়েছি। আবার অনেক প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাপ্ত তথ্য সব যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। এর আগে আমরা সাবিরার ছেলে ও তার ফ্ল্যাটমেট কানিজ সুবর্ণাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি, বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছি। অস্পষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। মামলার তদন্ত চলছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করে দ্রুত তদন্ত শেষ করবো। আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবো।’
মামলার বাদী ডা. সাবিরার ফুফাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার বলেন, ‘দেখতে দেখতে ২ বছর হয়ে গেলো এখনো জানতে পেলাম না খুনের কারণ। বিচার পেলাম না। কিছু হলো না। তবে পিবিআই বসে নেই। তারা কাজ করছেন। আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছে। হয়তো আমাদের ভাগ্যটা খারাপ। এ কারণে রহস্য উদঘাটন হচ্ছে না। কত বছর পরেও অনেক হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। আশা করছি, সাবিরা খুনের মামলারও রহস্য উদঘাটন হবে। দোষিরা গ্রেফতার হবেন। সাবিরার মা, ছেলে-মেয়েও তার খুনের বিচার চায়।’
জানা যায়, ২০২১ সালের ৩০ মে রাজধানীর কলাবাগান প্রথম লেনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের শোবার ঘর থেকে চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান ওরফে লিপির রক্তাক্ত ও দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গলা কাটা, পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও পোড়া ছিল। এ ঘটনায় ১ জুন সাবিরা ফুফাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ১৯ এপ্রিল ডা. সাবিরার স্বামী এ কে এম সামছুদ্দিন আজাদকে শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে ২৪ এপ্রিল তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সামছুদ্দিন আজাদ দু’টি বিয়ের মধ্যে একটির কথা গোপন করে ডা. সাবিরাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর স্বামী বিদেশে থাকেন জানিয়ে সাবিরা কলাবাগানে বাসাভাড়া নেন। তবে বিরোধ থাকার পরও সাবিরার বাসায় যাতায়াত করতেন সামছুদ্দিন আজাদ। সাবিরা খুনের পর বাসা থেকে তালাক নামাসহ বেশ কিছু ডকুমেন্ট পাওয়া যায়, যাতে ভিকটিমের প্রতি আসামির চরম ক্ষোভ থাকার বিষয়টি প্রতীয়মান হয়। এছাড়া সাবিরা খুন হওয়ার আগে তাদের দীর্ঘ সময় ম্যাসেঞ্জারে কথা হয়। সেখানে তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়।’
সারাবাংলা/এআই/এমও