৫২ বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে ৯৬৯ গুণ
৩১ মে ২০২৩ ১৩:২১
ঢাকা: স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয় ১৯৭২ সালের ৩০ জুন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ঘোষিত দেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ৫২ বছর পর দেশের ৫৩তম বাজেট (২০২২-২৩ অর্থবছর) আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পেশ করবেন। এই বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এই হিসাবে, গত ৫২ বছরের ব্যবধানে দেশের বাজেটের আকার বাড়ছে ৯৬৯ গুণ। বর্তমান সরকারের সর্বশেষ ১৫ বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় সাত গুণ।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে অর্থাৎ, টানা তিন মেয়াদে বাজেটের আকার বেড়েছে ৭ গুণ। ২০০৯ সালে দলটি ক্ষমতায় আসার পর ওই বছরের ১১ জুন (৩৯তম) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছরের ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। ওই বাজেটটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়ে যায়।
এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেট চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। আগামীকাল ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫তম এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পঞ্চম বাজেট। এবারের বাজেটে মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’।
বাজেটের আকার বৃদ্ধির এই হারকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১৫ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। তার মানে হলো, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। অর্থনীতির আকার বাড়লে বাজেটের আকারও বাড়বে। তবে প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও বাস্তবায়নের হার ক্রমান্বয়ে কমছে। অর্থবছরের শুরুতে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়, বছর শেষে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ফলে বাজেটের আকার বৃদ্ধি কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাই বাজেটের আকার বাড়ানোর পাশাপাশি বাস্তবায়নের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়লেও বাজেটের বাস্তবায়নের হার কমছে। তাই বাজেটের আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়নের হার বাড়াতে হবে। বাজেটের গুণগত মান এবং বাস্তবায়নের হার না বাড়লে এসব বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বাজেট বলা যায়।
বাংলাদেশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাজেটের আকার: স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩০ জুন (১৯৭২-৭৩ অর্থবছর) ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। এরপর ১৯৮১-৮২ অর্থবছরের জন্য ১৯৮১ সালের ৬ জুন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান দেশের দশম বাজেট উপস্থাপন করেন, যার আকার ছিল ৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ১৯৯১ সালের ১২ জুন ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। এটিও উপস্থাপন করেন এম সাইফুর রহমান।
পরবর্তীতে ২০০০ সালের ৮ জুন ২০০০-০১ অর্থবছরে ৩০তম বাজেটের আকার ছিল ৩৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকার। এটি উপস্থাপন করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। ২০১০ সালের ১০ জুন, ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেট ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দেশের ৫০তম বাজেট উপস্থাপন করেন। ওই বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কেটি টাকা। আগামীকাল ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। যার আকার হচ্ছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জিএস/আইই