যৌন হয়রানি প্রতিহতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই উদ্যোগ নিতে হবে
৩১ মে ২০২৩ ২২:৩১
ঢাকা: দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছু সংখ্যক শিক্ষকের নারীবিদ্বেষী ও কুরুচিপূর্ণ মনোভাবের কারণে যে অধগতি দেখা যাচ্ছে তার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানিমূলক ঘটনা প্রতিহত করতে এবং অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালযের শিক্ষক সমিতিকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বুধবার (৩১ মে) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানিমূলক ঘটনা বন্ধের দাবি জানিয়ে’ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচিতে এসব আহ্বাব জানানো হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও মাসুদা রেহানা বেগম, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস; প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ; অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম; ঢাকা মহানগর কমিটির আন্দোলন সম্পাদক জুয়েলা জেবুননেসা খান।
মানববন্ধনে বক্তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির অফিসকক্ষে সহকর্মীদের সামনে বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. নাজমা আফরোজ’র প্রতি প্রফেসর ড. এনামুল হকের যৌন উসকানিমূলক বক্তব্য এবং আচরণের তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন। এ সময় তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান।
সেইসঙ্গে ২০০৯ সালে হাইকোর্টের দেওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ নামে কমিটি গঠন বিষয়ক রায়ের বাস্তবায়ন এবং অনতিবিলম্বে এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের দাবি জানান। পাশাপাশি তারা নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘একসময় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছু সংখ্যক শিক্ষকের নারীবিদ্বেষী ও কুরুচিপূর্ণ মনোভাবের কারণে যে অধগতি দেখা যাচ্ছে তার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে যেখানে মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয় সেখানে একজন শিক্ষকের চেহারা যদি এমন হয় তাহলে তিনি কেমন ছাত্র তৈরি করবেন?’
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘একটি নারী বিদ্বেষী সমাজে আমরা বসবাস করছি, যেখানে নারীর সংগ্রাম করে টিকে থাকার মতো শক্ত অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। যৌন হয়রানির ঘটনায় নারী সহকর্মীর অভিযুক্ত শিক্ষকের নিকট জবাবদিহিতা চাওয়া কে মেনে নিতে না পারা সেইসঙ্গে পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোয় নারীর ক্ষমতায়নকে অস্বীকার করার বিষয়টি এবং সমাজের ভেতরের অবস্থা যে নারীর প্রতি অনুকূল নয় তার প্রতিফলন।’
উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা সরকারপ্রধান এবং শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই রায়টি সঠিকভাবে মেনে না চলায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সমগ্র দেশে যখন সমতার আন্দোলন চলছে তখন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে নারীর এই দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের জয়া সরকার। এছাড়াও সংহতি প্রকাশ করে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ। কর্মসূচিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারাসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাড. দীপ্তি শিকদার।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম