ঢাকা: আগামী অর্থবছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে (সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথ) ৮৭ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে ৮১ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সে হিসাবে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতেও আসছে অর্থবছরে বরাদ্দ বেড়েছে ৬ হাজার ১১০ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই প্রস্তাব পেশ করেন। স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরির সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আসছে অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘যোগাযোগ খাতে আমরা সকল মাধ্যম অর্থাৎ সড়ক, সেতু, রেল, নৌ ও আকাশপথের সমন্বিত উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো- অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরাপদ, টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী যোগযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।’
সারাদেশে রাস্তাঘাট, উড়াল সেতু, কালভার্ট নির্মাণের বিস্তারিত তুলে ধরে যানজট নিরসন ও নিরাপদ সড়ক উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাজধানী ঢাকা ও আশেপাশের যানজট দূর করতে ৬টি মেট্রোরেল লাইনের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের এ বিস্তৃতি যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশেষ করে গণপরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। একইসঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত হবে।’
‘রেলখাত উন্নয়নে মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর, ৭৩২টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ এবং ১৪৪টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মায়ানমারের নিকটে গুনদুম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণসহ আরও প্রকল্প চলমান।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৯৫ শতাংশ সমুদ্র বন্দরসমূহের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রফতানি বাণিজ্য এবং দেশি-বিদেশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে অন্যতম লজিস্টিকস হলো বন্দরসমূহ। এ লক্ষ্যে গভীর সমুদ্রে কন্টেইনার সংরক্ষণ ও কন্টেইনার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বর্তমানে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এছাড়া মোংলা বন্দরকে একটি আধুনিক সমুদ্র বন্দরে রূপ দেওয়ার জন্য কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, মংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং, আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা, সহায়ক জলযান সংগ্রহ ও নতুন জেটি নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।’
বিমান পরিবহন, যোগাযোগ ও আনুষাঙ্গিক সেবাকে আধুনিক ও বিশ্বমানে উন্নীত করার জন্য সরকার বিমান বহর সম্প্রাসরণ করেছে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের ৩য় টার্মিনাল ভবন, ৬৩ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে, যা ২০২৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। থার্ড টার্মিনালের সফট ওপেনিং হবে এ বছরের অক্টোবর মাসে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রফতানি পণ্য সংরক্ষণ এবং হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ৪৪ হাজার ৯৪৪ বর্গ ফুট আয়তন বিশিষ্ট এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার কাজ চলছে।’
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য শেষে তিনি বলেন, ‘পরিবহন ও যোগাযোগ যাতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮৭ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের প্রস্তাব করছি। বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে ৮১ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।’