Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংকটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট, বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ জুন ২০২৩ ২০:০৫

ঢাকা: ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ প্রতিপাদ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। এবারের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। একে সরকারের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনিমার্ণের অভিযাত্রার পথে সংকটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট বলছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। তবে ডলার ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ এবং বাজার সিন্ডিকেট দমন— এই বিষয়গুলোর ওপর বাজেটের সফলতা নির্ভর করছে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীনদের শরিক জোটের নেতারা। এমনকি এগুলোকে বাজেট বাস্তবায়নের বড় চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৩টার দিকে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের পর অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন নেতারা। এদিন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইতিহাসের বৃহত্তম বাজেট উত্থাপন করেন। প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে বাজেটের ডিজিটাল উপস্থাপনা প্রদর্শিত হয়।

অধিবেশন শেষে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা অভিমুখে যাত্রা; সেই অভিযাত্রার প্রথম সোপান আমরা অতিক্রম করছি। সংকটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট এটি।’ দ্রব্যমূল্য এখন কমছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমরা আশা করছি, বাজেটটি এমনভাবে করা হয়েছে যে, মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। জনবান্ধব এজন্যই বলেছি যে, সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে বাজেটটি তৈরি করা হয়েছে।’

ক্ষমতাসীন ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমার যেটা মনে হয়েছে, অর্থমন্ত্রী উন্নয়নের কথামালা দিয়ে বর্তমান বাস্তবতা কিছুটা অস্পষ্ট করেছেন। মূল্যস্ফীতি ও মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে- এটা খুব স্পষ্ট আকারে আসছে বলে আমার মনে হয়নি। ফলে চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা হবে সেটা একটু দুষ্কর হয়ে গেল মনে হয়।’ বিশেষ করে আইএমএফ’র শর্তের মধ্য দিয়ে যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ব্যাপার রয়েছে সেটা স্পষ্ট হয় নাই বলে মনে করছেন সাবেকমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেটকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার সহায়ক বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘এই বাজেট সময়োপযোগী ও জনকল্যাণমুখী। বিশ্ব অর্থনীতি যখন মন্দা, সেই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার সময় উপযোগী বাজেট দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, এই বাজেটের মাধ্যমে সেই স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট নগরায়ন এবং স্মার্ট জনগণ গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া নিম্নবিত্ত মানুষ যাতে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বাজেট ঘোষণা হয়েছে। সেইসঙ্গে ব্যবসায়ীরা যেন উপকৃত হন সে দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এতে করে বেকারত্ব কমবে, উদ্যোক্তা বাড়বে।’

বিজ্ঞাপন

সাবেক প্রতিমন্ত্রী নানক আরও বলেন, ‘এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে অগ্রসর হতে সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনি ইশতেহারের মাধ্যমে যে ওয়াদা করেছিলেন, এই বাজেট সেই ওয়াদা বাস্তবায়নের অংশ। দেশকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাস উপযোগী একটি স্মার্ট রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার সরকার জাতির কাছে এ বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এই বাজেটে দেশের ধনী-গরিব-মধ্যবিত্ত সবাই উপকৃত হবেন।’

ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমি মনে করি বাজেটে কোন খাতে কী বরাদ্দ আছে, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে, নিত্যপণ্যের দাম ঠিক রাখা। ডলার ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করা- এই তিন বিষয়ের চশমা দিয়ে বাজেটের সাফল্য নির্ধারণ হবে।’

বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাটাকে অব্যাহত রাখার একটা প্রচেষ্টা বাজেটে আছে জানিয়ে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, ‘এই বাজেটে দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা, নারী-শিশু-স্বাস্থ্য খাত এবং শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমি বলব যে, এর সবকিছুই নির্ভর করছে বাজার সিন্ডিকেট দমনের ওপর।’

তিনি বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে প্রশাসন কীভাবে শক্ত ও কঠোরভাবে বাজার সিন্ডিকেট ধ্বংস করবে এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ যথাসময়ে শিল্পাঞ্চল ও বাসাবাড়িতে সরবরাহ করবে। এখানে প্রশাসন কী ভূমিকা রাখবে তার উপর নির্ভর করছে বাজেটের সফলতা।’ যেহেতু বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব মোকাবিলায় শেখ হাসিনা মোটামুটি সফল, সুতরাং আগামী ছয় মাসে সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই বাজেট জনসাধারণকে সন্তুষ্টি দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের চূড়ান্ত আকার (ব্যয়) ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয় ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রাক্কলন করা হয়েছে এবারের বাজেটে। এছাড়া মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ শতাংশ।

এদিন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন। বাজেট অধিবেশনে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, চিফ হুইপসহ বিরোধীদলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, দুপুর ২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

আওয়ামী লীগ ওবায়দুল কাদের ক্ষমতাসীন দল জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রতিক্রিয়া বাজেট রাশেদ খান মেনন হাসানুল হক ইনু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর