Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেটে উপেক্ষিত সংস্কৃতি খাত, সমাবেশের ডাক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ জুন ২০২৩ ২১:২৮

ঢাকা: দেশে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে ৬৯৯ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যা গত অর্থবছরে এই খাতে প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৬২ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে এ খাতে প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৬৩৭ কোটি টাকা। তবে বিগত বছরের মতো এবারও সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি খাত উপেক্ষিত মন্তব্য করে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর সংস্কৃতি খাতে প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ কিছুটা (৬২ কোটি) বাড়লেও এতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিকাশের জন্য কোনো স্থায়ী বরাদ্দ নেই। এটি হতাশার বিষয়।’

বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় গোলাম কুদ্দুছ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংস্কৃতি খাতে সরকারের প্রস্তাবিত এই বাজেটে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও সংস্কৃতিকর্মীরা হতাশ হয়েছি। আমরা মনে করি, এই বাজেটে সংস্কৃতি খাতকে উপেক্ষা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে এসেছি যে জাতীয় বাজেটের এক শতাংশ যেনো অন্তত সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখানে এবার জাতীয় বাজেটে শতাংশ হিসেবে গতবারের তুলনায় অনেক কমেছে। এ বাজেট দিয়ে তো তাহলে অসাম্প্রদায়িক, সম্প্রীতির আধুনিক বিজ্ঞানমনষ্ক জাতি তৈরি করা দুষ্কর। আমরা সরকারকে এজন্য বলছিলাম উপজেলা পর্যায় থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত আমরা সাংস্কৃতিক জাগরণ গড়ে তুলতে চাই। সেটির জন্য যে অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ সেগুলোর ব্যবস্থাতো এ বাজেটে নেই। আমরা অনেকদিন থেকে বলে আসছি ৫০০ উপজেলায় একটা করে মুক্তমঞ্চ নির্মাণ করার জন্য, শিল্পকলা একাডেমি করার জন্য, সেসব উপজেলায় প্রশিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। অস্থায়ী না বরং স্থায়ীভাবে সঙ্গীত, নৃত্য, নাট্যকলা, আবৃত্তি, চারুকলার প্রশিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে স্থায়ীভাবে। এ ধরনের কোনো প্রকল্প কিন্তু এই প্রস্তাবিত বাজেটে নেই।’

গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘সংস্কৃতির যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বাংলার সার্বজনিন সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে— তার জন্য সংস্কৃতি খাতকে উপেক্ষার কোনো সুযোগ নেই। অথচ তার প্রতিফলন আমরা প্রস্তাবিত বাজেটে পাইনি। সমাজে সার্বিকভাবে যে অবক্ষয়ের চিত্র দেখতে পারছি, সেটা হয়েছে সংস্কৃতির বিপর্যয়ের কারণে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রগতিশীল মনন গঠনে সংস্কৃতি খাতে সরকারের আরও বেশী মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল।’

তিনি বলেন, ‘কিছু সংগঠনকে অনুদান দেওয়া বা দুস্থ শিল্পীদের সাহায্য করলেই তো সংস্কৃতির বিকাশ হয় না। এছাড়া দেখা যায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিল্পকলা একাডেমিকে দিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কিছু অনুষ্ঠান করলেই কি সংস্কৃতি বিকাশ হয়ে যাবে? সারাদেশে যে হাজার হাজার সাংস্কৃতিক সংগঠন ও কয়েক লক্ষ বাউল শিল্পী, যাত্রা শিল্পী থেকে শুরু করে লোক শিল্পীরা আছে তাদের চর্চায় রাষ্ট্রের ভূমিকা কি থাকবে তার কোনো নির্দেশনা নেই প্রস্তাবিত বাজেটে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরে গত ১৪ বছরে একটাও মিলনায়তন নির্মিত হয়নি। এ বিষয়েও কোনো দিক-নির্দেশনা নেই বাজেটে। আর তাই আমরা হতাশ। বাজেট উপস্থাপিত হলেও এটি কিন্তু পাস হয়নি। আমরা ৩ জুলাই সমাবেশের আহ্বান করেছি তাই। আমরা মনে করি, এখনও সময় আছে প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবর্তন আনার। সংস্কৃতি খাতে বাজেট বৃদ্ধির জন্য আমরা তাই দাবি জানাই। ৩ জুলাই বিকেল ৫টায় আমরা শহিদ মিনারে একটা সমাবেশের আয়োজন করে সেখানে এই দাবিগুলোর বিষয়ে জানাব।’

সার্বিকভাবে বাজেট বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৬০ থেকে ৬২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জাতীয় বাজেট কত কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে? মন্ত্রণালয় ও তার অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে বেতনভাতা বাড়ানো হয়েছে তাতেই তো এই ৬০-৬২ কোটি টাকা খরচ হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারিভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বর্তমানে যে খণ্ডকালীন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় আমরা তার সঙ্গে একমত না। আর তাই আমরা ৫০০ উপজেলায় স্থায়ীভাবে প্রশিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সঙ্গীত, নাট্যকলা, চারুকলা, নৃত্য, আবৃত্তিসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করার দাবি জানাই। প্রতিটি উপজেলায় কেনো স্থায়ী প্রশিক্ষক থাকবে না? খণ্ডকালীন দিয়ে কি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন ঘটানো যায়?’

আগামী ৩ জুন বিকেল ৫টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে সংস্কৃতি খাতের বাজেট নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানান সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এই নেতা।

উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, দায়বদ্ধতা এবং দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থনের উদ্ভাসিত আলোয় ২০৪১ সালের মাঝে সম্পূর্ণ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত জ্ঞানভিত্তিক উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে জাতির পিতার অন্তর-মন-প্রোথিত ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন পূরণের সুবর্ণ রেখাটি বাংলাদেশ স্পর্শ করবে বলে আশাবাদ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে এবারের বাজেটের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায়। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকির চাপ সামমলানো এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কৃষি, খাদ্য, নতুন কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা।

আগামী এক বছর দেশ পরিচালনার সার্বিক আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে এই বাজেটে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট ২৬ জুন অনুমোদন হবে আর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।

সারাবাংলা/এসবি/একে

অর্থমন্ত্রী জাতীয় বাজেট টপ নিউজ সংস্কৃতিখাত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর