৩ ঘণ্টা পর থামল ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, আহত ১৫
১ জুন ২০২৩ ২২:০১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: র্যাব ও পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রায় তিন ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ। সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি বিবাদমান গ্রুপের নেতাদের।
দফায় দফায় সংঘর্ষের মধ্যে বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৪টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান। প্রক্টরিয়াল বডি’র সদস্যসহ র্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর সংঘাতে জড়িতরা ফিরে যান।
শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ সিএফসি ও সিক্সটি নাইনের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয় বুধবার রাতে। রাত ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের একটি হোটেলে ভাত খেতে গিয়ে তর্কাতর্কিতে জড়ান দুই উপগ্রুপের দুই নেতা। এ সময় একজন মারধরের শিকার হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই ছাত্রলীগের উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় প্রায় দেড়ঘণ্টা সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিক্সটি নাইন গ্রুপের একে নেতা ওই হোটেলে ভাত খেতে গিয়ে মারধরের শিকার হন। এর জের ধরে সোয়া ১টার দিকে ক্যাম্পাসে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা। দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঠা নিয়ে শাহজালাল হল ও শাহ আমানত হলের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা থেমে থেমে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়ায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নুরুল আজিম শিকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সামান্য কথা কাটাকাটির জেরে সংঘর্ষ শুরু হয়। আমরা প্রথমে ছাত্রদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। কিন্তু দফায় দফায় সংঘর্ষে উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত সদস্যদের সঙ্গে রিজার্ভ ফোর্স ও র্যাব সদস্যরা ক্যাম্পাসে যোগ দেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এখন ক্যাম্পাস শান্ত আছে। আশা করি, কেউ অহেতুক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করবে না।’
সিএফসি উপগ্রুপের নেতারা জানান, সংঘর্ষে তাদের দুই নেতাসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। দুই নেতা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অন্যদিকে, সিক্সটি নাইন উপগ্রুপ তাদের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তবে আহতদের নাম জানায়নি কোনো পক্ষ।
জানতে চাইলে সিএফসি গ্রুপের নেতা চবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মির্জা খবির সাদাফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাতের ঘটনার পর আমরা প্রক্টর স্যারদের সঙ্গে বসে একমত হয়েছিলাম যে, আর কোনো ঝামেলা হবে না। আমরা আমাদের ছেলেদের নিয়ে হলে চলে যাই। তারাও আর হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে যায়। কিন্তু দুপুরে তারা ফের পরিকল্পিতভাবে আমাদের একজনের ওপর হামলা করে। আমরা প্রক্টর স্যারকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন।’
‘আমাদের সঙ্গে কথা বলার পর স্যারকে আমাদের এক ভাই গেটে এগিয়ে দিতে যান। সেখানে সিক্সটি নাইনের নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করলে মূলত সংঘর্ষ শুরু হয়। এখন আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। তারা আমাদের যেভাবে পরামর্শ দেন আমরা তাই করব।‘
সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাতের ঘটনার পর সব ঠিক ছিল। কিন্তু সকালে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের দেখা হওয়া মাত্র হামলার ঘটনা ঘটে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সেখান থেকেই মূলত দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষের শুরু হয়।’
ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিএফসি শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান নওফেল এবং সিক্সটি নাইন সাব চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
সারাবাংলা/এইচএফ/পিটিএম