Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেট নিয়ে যা বললেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী-রাজনীতিকরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১ জুন ২০২৩ ২৩:২৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। ব্যবসায়ী সংগঠন ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাজেটকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে বিএনপি একে ‘জনগণের সর্বস্ব লুটে নেওয়ার বাজেট’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যায় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে ঘোষিত বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এর আগে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন।

দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

ঘোষিত বাজেটকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক বাজেট’ হিসেবে অভিহিত করে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেছেন, এই বাজেট আমদানিকে নিরুৎসাহিত করে দেশীয় শিল্প সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হবে। তবে তিনি মনে করছেন, বাজেটে ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে সচেতন থাকতে হবে। না হলে বাস্তবায়নে চাপ সৃষ্টি হবে।

চেম্বার সভাপতি বলেন, ‘ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা চার লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করছি। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে ছয় লাখের বেশি মানুষকে কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। ডলার সংকটের কারণে অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শ্লথ হয়ে গেছে। এর মধ্যে সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করায় অবকাঠামো উন্নয়নের খরচ আরও বেড়ে যাবে। এই শুল্ক আগের মতো করার সুপারিশ করছি।’

সর্বজনীন পেনশন চালু ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উপকারভোগীদের ভাতা বাড়ানো, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ২২০০ শয্যায় উন্নীত করা এবং চট্টগ্রামে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি ।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

বাজেটকে সুচিন্তিত, জনকল্যাণমুখী ও সাহসী আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হলেও দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব। বিশ্ব অর্থনীতিতে রফতানি বাণিজ্য মন্দা, তাই দেশের বড় বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী পোশাক শিল্প টিকিয়ে রাখতে রফতানিতে প্রযোজ্য উৎস কর সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে শূন্য শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। বিদেশি এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রদানে যে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হবে, তা সরকারের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ঘাটতি মোকাবেলায় বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার দাবি জানাই।’

তার মতে, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে তদারকি এবং প্রতি তিন মাস অন্তর কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য টার্গেট করে দিলে, প্রয়োজনীয় জবাবদিহি থাকবে। না হলে ব্যয়বৃদ্ধি ও সময় ক্ষেপণ বাড়বে।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতিতে বলেছেন, বাস্তবতা ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই বাজেট একটি ইতিবাচক দিকনির্দেশনা, যাতে আগামী অর্থবছরে সাড়ে শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য রয়েছে। বাজেটে প্রায় সাড়ে ৬০ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলার ইতিবাচক পদক্ষেপ আছে।

দুই নেতা আরও বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চারটি মূল স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত এই বাজেট। এগুলো হচ্ছে- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনমি। ফলে এবারের বাজেটটি হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রথম বাজেট। কেউ কেউ এই বাজেটকে উচ্চাভিলাসী বলে মন্তব্য করলেও আমরা মনে করি, এটি শতভাগ জনবান্ধব এবং গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও চাওয়া-পাওয়ার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘বাজেট শুনতে ভালো লেগেছে, কিন্তু যেসব খাত থেকে বাজেট পূরণ করার কথা বলা হচ্ছে, সেটা চ্যালেঞ্জিং। অসম বাজেট, এত বড় ঘাটতি বাজেট দিয়ে স্বপ্নপূরণ সম্ভব নয়। অবাস্তবায়নযোগ্য একটি কল্পনাপ্রসূত বাজেট। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ এমনিতেই দিশেহারা, এর ওপর ভ্যাট ও কর দেওয়া তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। মানুষের মাঝে স্বস্তি ফেরার আগে আরও বড় অস্বস্তি নিয়ে এসেছে এ বাজেট। এটা করের বোঝা ছাপিয়ে জনগণের সর্বস্ব লুটে নেওয়ার বাজেট।’

শাহাদাত আরও বলেন, ‘সরকারের ব্যর্থতার কারণে এমনিতেই দেশের অর্থনীতি নানামুখী চাপে। ডলারের সংকট এখনও প্রকট। পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে গেলে কোনো কোনো ব্যাংক ফিরিয়ে দিচ্ছে। আবার রফতানি আয় তুলতে গেলেও সহজে দিচ্ছে না। চাল, ডাল, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনিসহ প্রায় প্রতিটি জিনিসেরই দাম বাড়তি। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও সারের দাম কয়েক মাস আগেই বাড়ানো হয়েছে। কমেছে ডলারের তুলনায় টাকার মান। প্রণোদনা দিয়েও প্রবাসী আয় টানতে পারেনি সরকার। রফতানি আয়ের প্রবণতাও কমতির দিকে। আর আছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নানা ধরনের শর্ত পূরণের চাপ।’

‘বেশি ব্যাংক ঋণ নিয়ে সরকার মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দিচ্ছে। এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল করা, আয়বৈষম্য রোধ করা এবং রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করাই বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ। সুতরাং এই বাজেট গণবিরোধী, জীবনযাত্রার মানকে নিম্নমুখী করবে, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি করবে। এটি জনগণের পকেট কাটার বাজেট। আমরা এ প্রতিক্রিয়াশীল বাজেটের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

চট্টগ্রাম বাজেট প্রতিক্রিয়া


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর