প্রস্তাবিত বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নতুন কিছু নেই
২ জুন ২০২৩ ১১:৫৫
ঢাকা: দেশে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নতুন কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চলমান সব কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখার কাজ অব্যাহত রাখার বিষয়ে জানানো হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে এসব তথ্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্মৃতি ও স্মারক সংরক্ষণে আমাদের সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে আমরা যে সব ভাতা প্রদান করে আসছি, তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জীবিত মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃতদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সুবিধাভোগীদের নাম ও পরিচিতি নিশ্চিত করে তাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংবলিত ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম এমএস) প্রস্তুত করা হয়েছে। জি-টু-পি পদ্ধতিতে সরাসরি ভাতাভোগীদের ভাতা প্রদান প্রক্রিয়ায় এ ডাটাবেজ ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচিতি নিশ্চিতকল্পে তাদের অনুকূলে স্মার্ট কার্ড ও ডিজিটাল সনদ প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৩০ হাজার ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৫ হাজার নিবাস হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রত্যেক বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর কবর/সমাধি একই নকশায় (ডিজাইনে) নির্মাণের কাজও চলমান আছে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখার কাজ অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানান, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণ ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৬৪ জেলার ২৯৩টি উপজেলার ৩৬০টি স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ/জাদুঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ২৭১টি ঐতিহাসিক স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ১ হাজার ৬৬১ জন সদস্যের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে ‘বীরের কণ্ঠে বীর গাঁথা’ প্রকল্পের মাধ্যমে সব জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য রেকর্ডের জন্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, দায়বদ্ধতা এবং দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থনের উদ্ভাসিত আলোয় ২০৪১ সালের মাঝে সম্পূর্ণ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত জ্ঞানভিত্তিক উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে জাতির পিতার অন্তর-মন-প্রোথিত ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন পূরণের সুবর্ণ রেখাটি বাংলাদেশ স্পর্শ করবে বলে আশাবাদ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে এবারের বাজেটের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা। এছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভর্তুকির চাপ সামমলানো এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাজেটে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা কৃষি, খাদ্য, নতুন কর্মসংস্থান সৃজন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা।
আগামী এক বছর দেশ পরিচালনার সার্বিক আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে এই বাজেটে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট ২৬ জুন অনুমোদন হবে আর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।
সারাবাংলা/এসবি/ এনইউ