Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্যানসারের সঙ্গে লড়ে চলে গেলেন আফছারুল আমীন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ জুন ২০২৩ ১৮:৫৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের সামনের কাতারের সংগঠক, আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী, চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ডাক্তার আফসারুল আমীন মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

শুক্রবার (২ জুন) বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আফছারুল আমীনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

বিজ্ঞাপন

আফছারুল আমীনের ব্যক্তিগত সহকারী দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, তিন বছর ধরে তিনি ক্যানসারে ভুগছিলেন। করোনা মহামারির শুরু থেকেই কার্যত তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এবং সিঙ্গাপুরে উন্নত চিকিৎসার পরও সুস্থ হননি। গত তিন বছর ধরে তিনি রাজনৈতিক, সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেননি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত প্রায় একমাস ধরে তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

আফছারুল আমীনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনে। এরপর তার মরদেহ চট্টগ্রামে আনা হবে। চট্টগ্রামেই তার দাফন হবে বলে দেলোয়ার জানিয়েছেন।

৭৬ বছর বয়সী আফছারুল আমীন স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন। বড় ছেলে ফয়সাল আমীন এবং ছোট ছেলে চিকিৎসক মাহিদ বিন আমীন।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে থাকা আফছারুল আমীন নগরীর ডবলমুরিং-খুলশী-হালিশহর আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর তাকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেন। সেবার তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসভায় তিনি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে দফতর বদলে তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের দায়িত্ব পান।

বিজ্ঞাপন

২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি আরও দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন।

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আফছারুল আমীন প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, বন্দর রক্ষার আন্দোলন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ‘অসহযোগ আন্দোলন’সহ বিভিন্ন সংগ্রামে তিনি মহিউদ্দিনের সঙ্গে ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল নানা আন্দোলনের তার সরব ভূমিকা ছিল।

আফছারুল আমীনের ছাত্রজীবনের সহপাঠী সাংস্কৃতিক সংগঠক ডা. চন্দন দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আগ থেকেই আফছারুল আমীন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। স্বাধীনতার পর মুজিববাদী ছাত্রলীগের সঙ্গে সে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে। ৭০ সালে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই। তখন থেকেই ঘনিষ্ঠতা। একই ব্যাচের ছাত্র হলেও সবার সঙ্গে তো আর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয় না। কিন্তু আফছারুল আমীনসহ আমরা কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। এর মধ্যে সবাই যে একই রাজনৈতিক মতাদর্শের তা নয়, আমি ভিন্ন ছাত্র সংগঠনে ছিলাম, কিন্তু বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে সেটার কোনো প্রভাব পড়েনি।’

‘প্রগতিশীল, সাংস্কৃতিক চেতনা তার মধ্যে ছিল। আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী হিসেবে যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে তার যতটুকু ভূমিকা রাখা প্রয়োজন ছিল, সেটা সে পালন করে গেছে। পেশাগত জীবনে দেওয়ানহাট মোড়ে নিজস্ব জায়গার ওপর একটি চেম্বার খুলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতো। মূলত সেখান থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো। পরে এমপি-মন্ত্রী হল। কিন্তু আমাদের সম্পর্কে কখনও ছেদ পড়েনি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরও যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। সত্তরের দশকে আমরা যারা ছাত্র রাজনীতি করেছি, তাদের মধ্য থেকে অনেকেই হারিয়ে গেছে। আফছারও চলে গেল। এই মৃত্যু আমাদের জন্য অনেক শোকের’— বলেন চন্দন দাশ

আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে শোক

আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখতে আফছারুল আমীন আমৃত্যু লড়ে গেছেন। তৃণমূলের রাজনীতিকে সুসংগঠিত করার পাশাপাশি চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে জনসেবা করেছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গণে যে শুণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা পুরণ হবার নয়। প্রজন্ম থেকে থেকে প্রজন্মে একজন আদর্শিক নেতা হিসেবে কর্মীদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন। তার কর্ম এবং সাংগঠনিক কৌশল আমাদের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গভীর শোক প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘জননেতা আফছারুল আমীন দেশ ও জাতির কঠিন সময়ে সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রসেনানি ছিলেন। প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় তিনি প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা দলের একজন পরীক্ষিত নেতাকে হারালাম।’

চট্টগ্রামের ১৪ দলের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম সুজন শোক বিবৃতিতে বলেন, ‘আফছারুল আমীন চিকিৎসার মতো মহান পেশার পাশাপাশি রাজনীতিকে তার জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মৃত্যু রাজনীতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।’

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

চট্টগ্রাম জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি পাঠিয়েছেন। বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা বলেন, ‘সাবেক ছাত্রনেতা, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সার্বক্ষনিক কর্মী ছিলেন আফছারুল আমীন। ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষকে সেবা দিয়েছেন। রাজনীতির পাশপাশি চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে জনসেবা করে গেছেন তিনি।’

আফছারুল আমীনের মৃত্যুতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এএসএম লুৎফুল আহসান,  চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক ও মুখপাত্র ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।

সারাবাংলা/আরডি/একে

আফসারুল আমিন চট্টগ্রাম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দু’দিনে ভারতে ৯৯ টন ইলিশ রফতানি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪

সম্পর্কিত খবর