বাজেটে পোশাক খাতের জন্য দিক-নির্দেশনা খুঁজে পায়নি বিজিএমইএ
২ জুন ২০২৩ ২০:২৩
ঢাকা: প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে পোশাক খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা খুঁজে পায়নি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। আবারও পোশাক খাতে উৎসে কর আগামী ৫ বছরের জন্য দশমিক ৫০ শতাংশ, নগদ সহায়তার ওপর আরোপকৃত ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহার, করপোরেট কর ১২ শতাংশ ও পোশাক খাতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার (২ জুন) বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এসব দাবি তুলে ধরেন। এ সময় বিজিএমইএ’র অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘অনেকেই বলছেন ২০২৬ সালের পর থেকে প্রণোদনা দেওয়া যাবে না। পোশাকের ক্ষেত্রে এটি এখন থেকেই কমাতে বলছেন তারা। এটি আসলে ভুল হবে। আমেরিকায় অনেক ক্ষেত্রেই প্রণোদনা রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও প্রণোদনা রয়েছে। গার্মেন্টেসের ক্ষেত্রে প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া সম্পূর্ণরূপে ভুল সিদ্ধান্ত হবে। প্রণোদনা না কমানো হলে, নীতি সহায়তা পাওয়া গেলে, বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য প্রণোদনা দেওয়া হলে; আমরা আরও বিনিয়োগ করবো বলে কথা দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটে পোশাক খাতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে বলা হয়েছে। কিন্তু ভেতরে এখনও আমরা সেই আলোকে কিছু পাইনি। এই সেক্টরকে আরও সাহস দিতে হবে যাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাজেট পাশ হলে আমরা বলতে পারব— কী পেয়েছি আর কী পায়নি।’
লিখিত বক্তব্যে ফারুক হাসান বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণায় আমরা রফতানিমুখি বস্ত্র ও তৈরি পোশাকখাতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা খুঁজে পাইনি। বিশেষ করে আমরা উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব না করে ২০২১-২২ অর্থবছরের যেটি ছিল, অর্থাৎ ০.৫০ শতাংশ করার জন্য প্রস্তাব করেছিলাম। কারণ এমনিতেই কোভিডের কারণে আমাদের শিল্পে যে ক্ষতি হয়ে গেছে সেটি পুষিয়ে নিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি, তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একদিকে বিশ্বেব্যাপী মন্দা চলছে খুচরা বিক্রয় চাহিদা কমে এসেছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেল সহ সব কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের রফতানি আয় কমতে শুরু করেছে, তবে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আমাদের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সেটিও এই উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির ফলে ইউনিট ভ্যালু বেড়ে যাওয়ায় কারণে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেট বক্তব্যে অনান্য বছরের মতো রফতানিখাতগুলোর জন্য প্রণোদনা বাবদ অর্থ বরাদ্দের কোনো ঘোষণা আসেনি। যেখানে আমাদের বেশিকিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ছিল সেখানে আমাদের সামনে বিষয়টি এখন অজানা রয়ে গেছে।’
দাবি-দাওয়া তুলে ধরে ফারুক হাসান বলেন, ‘চলমান সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উৎসে কর ২০২১-২২ অর্থবছরের নার ০.৫০ শতাংশ ধার্য করে আগামী ৫ বছর পর্যন্ত তা কার্যকর করার জন্য পুনরায় সরকারের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা নগদ সহায়তার ওপর আরোপকৃত ১০ শতাংশ কর প্রতাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলাম, যেহেতু নগদ সহায়তা কোন ব্যবসায়িক আয় নয়, তাই নগদ সহায়তার অর্থকে করের আওতার বাইরে রাখাই যুক্তিসঙ্গত। নগদ সহায়তার ওপর আরোপকৃত ১০ শতাংশ কর প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি৷ করপোরেট কর ১২ শতাংশ হারে আরোপ ধার্য করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে এই নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় পোশাক শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি আমাদের প্রত্যাশা ছিল। দেশের রফতানি আয় ও জিডিপিতে যারা সরাসরি অবদান রাখছেন সেই সব শ্রমিক ভাই-বোনদের উন্নত নাগরিক সেবা প্রাপ্তি পক্ষান্তরে শিল্প ও অর্থনীতিকেই লাভবান করবে। তাই সামাজিক সুরক্ষা খাতে পোশাক শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।’
বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ইতিহাসের বৃহত্তম এই বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে এবারের বাজেটের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায়।
প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের চূড়ান্ত আকার (ব্যয়) ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয় ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে