‘সরকার নয়, কষ্ট দিচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতি’
৩ জুন ২০২৩ ১৫:২৩
ঢাকা: কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিশ্বে যারা স্যাংশন দিচ্ছে, যারা যুদ্ধ বাধাচ্ছে তারাই কষ্ট দিচ্ছে। কষ্টটা দিচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতি। আমরা কষ্ট দিচ্ছি না। আমাদের জনগণকে আমরা কষ্ট দিতে চাই না।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যে নেতিবাচক বিষয়গুলো নেতিবাচক সমালোচনার উৎস হয়েছে; সেগুলো দূর করে ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসাটাই হবে এই বাজেটের লক্ষ্য দাবি করেন তিনি।
শনিবার (৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বাজেট নিয়ে শরিক জোটের নেতাদের সমালোচনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সবার সমালোচনা করার অধিকার আছে। আমরা সব সমালোচনাই শুনবো। বাজেট বক্তৃতা চলবে। ২৬ জুন বাজেট পাস হবে। তার আগে অনেকেই বক্তব্য রাখবেন। পক্ষেও বলবেন, বিরুদ্ধেও বলবেন। এর মধ্য দিয়ে যদি কোনো বিবেচনা করতে হয় সেটাও অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী দেখবেন।’
‘সারা দুনিয়াতে কষ্ট পাচ্ছে। কেন বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছেন? সারাবিশ্বের ছবি এটি। বাংলাদেশে কি একটা লোক না খেয়ে মরেছে? কষ্ট তো আছে! বিশ্বে যারা স্যাংশন দিচ্ছে, যারা যুদ্ধ বাধাচ্ছে তারাই কষ্ট দিচ্ছে। কষ্টটা দিচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতি। আমরা কষ্ট দিচ্ছি না। আমাদের জনগণকে আমরা কষ্ট দিতে চাই না। কিন্তু কষ্টটা তো পাচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে। আমরা আমদানি করি অনেকে বেশি দামে। আমাদেরকে বিক্রি করতে হয় তার চেয়ে অনেক কম দামে। এখানে পার্থক্যটা দেখেন? সাধারণ মানুষের জন্য তো স্যাক্রিফাইস শেখ হাসিনার সরকার করছে’— বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
সরকারের টানা মেয়াদের শেষ বছরের বাজেট। কিন্তু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে ডলার সংকটসহ বিদ্যুৎ পরিস্থিতির ভোটের মাঠে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেতিবাচক দিকগুলোকে সহনীয় পর্যায়ে ইতিবাচক ধারায় নিয়ে আসা যায় সে কারণেই এই বাজেট প্রণীত হয়েছে। এ বাজেটে নেতিবাচক যে বিষয়গুলো আজকে নেতিবাচক সমালোচনার উৎস হয়েছে; সেগুলো দূর করে ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসা বাজেটের লক্ষ্য।’
‘খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ সরকার কি দ্রব্যমূলের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। কোথায় কোথায় সমস্যা দেখছে। এর মধ্যে কিছু কিছু জিনিসের দাম যে কমেছে সেটাও তো সত্য। বাজার এমন একটা বিষয়, বাজার উঠানামা করবেই। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাজার উঠানামা আরও বেশি করে করছে। কারণ বিশ্বব্যাপী যা হচ্ছে আমরা তো সেখান থেকে আইসোলেটেড কোনো আইল্যান্ড নই। এটা তো বিচ্ছিন্নভাবে দেখতে পারেন না। আপনি আশেপাশের দেশগুলোতে যান, তখন আপনি নিজেই অবাক হবেন। এই তুলনায় তো আমরা অনেক ভালো আছি। এই প্রশ্নটাই জাগবে, আপনার মনে জাগবে। বাংলাদেশে যে বাস্তবতা সেই বাস্দবতাই এখানে। ভারসাম্যমূলক একটি নীতি অনুসরণ করে সব দিক যাচাই-বাচাই করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারসোনালি এফোর্ট দিয়েছেন এ বাজেট করার জন্য।’
দ্রব্যমূল্য তথা বাজার উঠানামার পেছনে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কোনো কারসাজি আছে কি না এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা কি ব্যবসায়ীদের প্রতিপক্ষ। সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টা দেখছে। এটা তাদের কাজ।’
বাজেটের সমালোচনা করে অনেকেই আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে নির্বাচনি বাজেট হিসাবে সমালোচনা করছেন এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনি বাজেট; এভাবে দেখছেন কেন? নির্বাচন যখন সামনে সেটা তো আমাদের মাথায় থাকবেই। সেটা অবশ্যই আছে।’
লিখিত তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের বিদেশী ঋণ গ্রহণ নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। ঋণ যেমন একজন যোগ্য ব্যক্তির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে তেমনি একটি দেশের অর্থনৈতিক সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এগিয়ে যাওয়ার পথে শক্তি জোগায়। ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে গৃহীত অর্থ দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে তা ধনী-গরিব সবার সমান অধিকার করে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে সাহায্য করে। বিশ্বে প্রতিটি দেশেই ঋণ গ্রহণ করে সরকার পরিচালনা করে থাকে। বর্তমান বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য জিডিপির মাত্র দুই উৎস থেকে গ্রহণ করা হয়েছে দুই শতাংশ । এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারের অভ্যন্তরে বৈদেশিক ঋণ দীর্ঘকাল ধরে জিডিপির ৪০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে, যা ভারতে ৯২ শতাংশ, পাকিস্তানে ৬৯ শতাংশ, আমিরকায় ১২৩ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১০১ শতাংশ, ইউরোপের বহু দেশে এবং জাপানে এই ঋণ শতভাগের উপরে রয়েছে। সরকারের ঋণ দেশের অর্থনীতির আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, উপ দফতর সম্পাদক সায়েম খানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/ইআ