শিশুদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রস্তাব চিকিৎসকদের
৩ জুন ২০২৩ ১৯:৪৭
ঢাকা: শিশুদের অত্যাধুনিক চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল করার প্রস্তাব করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেলে যেখানে একই বেডে ২ থেকে ৩ জন শিশুকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে তাদের জন্য আলাদা হাসপাতাল করা হলে চিকিৎসা সেবার মানও উন্নত হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
শনিবার (৩ জুন) দুপুরে ঢামেক সভাকক্ষে আয়োজিত ‘এনাউল অডিট এন্ড লঞ্চিং অব ইয়ারবুক’ শীর্ষক সেমিনারে এ প্রস্তাবের কথা বলেন চিকিৎসকরা। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল আলম চৌধুরী, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবেশ চন্দ্র তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. আহম্মেদ হোসেন হারুন। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অনুষদের ডিন ডা. শাহারিয়ার নবি শাকিল ও সহকারী পরিচালক ডা. আশরাফুল আলমসহ অনান্য চিকিৎসকেরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগ, নিওনেটাল সার্জারি বিভাগ, শিশু সার্জিক্যাল অনকোলজী বিভাগ এবং শিশু ইউরোলজী বিভাগের আয়োজনে সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফ-উল হক কাজল।
শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক বলেন, ‘১৯৯৩ সালে ঢামেকে ১০টি বেড নিয়ে শিশু সার্জারি বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বেড সংখ্যা ৮৭টি। যেখানে বহির্বিভাগ, আন্তঃবিভাগ জরুরি চিকিৎসা এবং বিশেষায়িত চিকিৎসা (নবজাতক, শিশু ক্যান্সার, শিশু ইউরোলজি, লেপারোস্কোপি সার্জারি এবং কলোনোস্কোপি) দেওয়া হচ্ছে। এখানে ৮৭টি বেডের বিপরীতে প্রতিনিয়ত ১৫৫ বা এর অধিক শিশু রোগী ভর্তি থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি, কাজের চাপ এবং বিশেষায়িত সেবাও বৃদ্ধি পেয়েছে।’
সেমিনারে ২০২২ সালের বাৎসরিক কার্যক্রমের উপস্থাপন এবং ২০১৪-২০২২ সালের সার্বিক কার্যক্রমের মূল্যায়ন করা হয়। যেখানে তুলে ধরা হয়, ২০১৪ সালে বহিঃবিভাগে রোগীর সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৩৩ জন। সেটি বেড়ে ২০২২ সালে হয়েছে ১৬ হাজার ৩২১ জন। জরুরি রোগী ভর্তি- ২০১৪ সালে ১ হাজার ৩১৫ জন। সেটি বেড়ে ২০২২ সালে হয়েছে ২ হাজার ৮৮ জন। রুটিন অপারেশন- ২০১৪ সালে ছিল ৩২৮টি। সময়ের পরিক্রমায় সেটি বেড়ে ২০২২ সালে ১ হাজার ৪৯৯টি অপারেশন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। ২০২২ সালে মোট সার্জারি সম্পন্ন হয় ৩ হাজার ১৬৭টি (রুটিন অপারেশন ১১৯৮টি ও জরুরি অপারেশন ১ হাজার ৯৬৯)।
উল্লেখ করা হয়, এখন পর্যন্ত এই বিভাগ থেকে ৪১ জন চিকিৎসক এমএস ডিগ্রি সম্পন্ন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে SDG লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে বিশেষায়িত শিশু সার্জিক্যাল সেবা দিয়ে আসছেন। বর্তমানে এই বিভাগে ১১টি গবেষণা কার্যক্রম চলমান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও নবজাতক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুল হানিফ টাবলু বলেন, ‘বেডের সংখ্যার চেয়ে এখানে কয়েক গুন বেশি শিশু রোগী ভর্তি থাকে। শিশুদের আরও উন্নত চিকিৎসার কথা চিন্তা করে হলেও ঢাকায় সরকারি একটি বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল করা দরকার। রাজধানীর শ্যামলিতে যেই শিশু হাসপাতালটি আছে সেটা সায়ত্বশাসিত। কাজেই পুরোপুরি সরকারি একটি হাসপাতাল করা খুবই প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যময় হাসপাতাল। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী এখানে চিকিৎসা নেয়। কাউকে ‘না’ বলা হয় না। সব জটিল চিকিৎসাই এখানে সম্ভব।’
চিকিৎসকদের আন্তরিকতার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং কোয়ালিটির ক্ষেত্রে ঢাকা মেডিকেলের জুড়ি নেই।’
ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন মেডিকেল থেকে যেসকল মেধাবী চিকিৎসকরা পাশ করে দেশের বাইরে চলে গেছেন; তাদের যদি সেই সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায় তাহলে তারাও দেশে চলে আসবেন।’
শিশুদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে চিকিৎসকদের যে সকল প্রস্তাবনা রয়েছে সব কিছু নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলেও জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এসএসআর/ইআ