Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ: প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩ জুন ২০২৩ ২০:৫৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের একবছর পূর্ণ হয়েছে। বিস্ফোরণে হতাহতের দায় থেকে মুক্তি পেয়েছেন ডিপোর মালিকপক্ষ। তবে হতাহতদের মধ্যে কিছু পরিবারও এখনও মালিকের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে অভিযোগ করে বিক্ষোভ করেছে চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্ক নামে একটি সংগঠন।

বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের বর্ষপূর্তিতে শনিবার (৩ জুন) বিকেলে নগরীর চেরাগি পাহাড় মোড়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ৪ জুন দিবাগত রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এরপর সেখানে কয়েক দফা বিস্ফোরণ ঘটে। ডিপোতে থাকা রাসায়নিকের কারণে ছড়িয়ে পড়া ওই আগুন ৮৬ ঘণ্টা পর বিভিন্ন বাহিনীর চেষ্টায় নেভানো হয়। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে প্রথমে ৪১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া এবং ডিপো পরিষ্কারের সময় বেশ কিছু মানবদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। আহত হন প্রায় দুই শতাধিক।

বিস্ফোরণের তিনদিন পর ৭ জুন রাতে সীতাকুণ্ড থানায় দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারায় একটি মামলা করেছিলেন ওই থানার এসআই আশরাফ সিদ্দিকী। মামলায় ডিপোর ডিজিএম (অপারেশন) নুরুল আকতার, ম্যানেজার (অ্যাডমিন) খালেদুর রহমান, সহকারী অ্যাডমিন অফিসার আব্বাস উল্লাহ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. নাসির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) আবদুল আজিজ, কন্টেইনার ফ্রেইট স্টেশনের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, একই বিভাগের নজরুল ইসলাম ও জিএম (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) নাজমুল আকতার খানকে আসামি করা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

১১ মাস তদন্তের পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পুলিশ বিস্ফোরণে ‘কারও দায় নেই’ মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন।

এক বছরের মাথায় চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্ক আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘বিএম কনটেইনার ডিপোর দুর্ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম দুর্ঘটনা। ৫১ জন শ্রমিক মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছে। প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপর চট্টগ্রামের স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এবং ডিপো কর্তৃপক্ষের বিবৃতি ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা, মারাত্মক আহত প্রত্যেক শ্রমিককে ছয় লাখ এবং অন্যান্য আহত শ্রমিকদের চার লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।’

‘কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ডিএনএ টেস্টে চিহ্নিত না হওয়ার অজুহাতে এখনো সাত থেকে আটজন নিহত শ্রমিকের পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। আহতদের বড় অংশ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পায়নি। আহতদের ৩৬ জন ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় গত বছরের ১৮ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিল। জেলা প্রশাসক ওই ৩৬ জনের তালিকা বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পরেও তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি।’

অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে না পেরে অনেক শ্রমিক পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, ‘শ্রম আইনের ১২৩ ধারা অনুযায়ী চূড়ান্ত পাওনা বা ক্ষতিপূরণের টাকা সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক হলেও একবছরেও শ্রমিকরা তাদের পাওনা পাচ্ছে না। আহত শ্রমিকদের অনেকের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, অনেকে কানে শুনতে পায় না, অনেকে পায়ের উপর ভর দিয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ফলে তাদের প্রায় সবাইকে পঙ্গুত্বের জীবন বরণ করে নিতে হচ্ছে এবং এক বছর ধরে তারা আয়-রোজগারহীন জীবনযাপন করছে।’

বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ মিয়ার সভাপতিত্বে ও ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার পাহাড়ি ভাটাচার্য, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সংগঠক ইকবাল হোসেন, জাতীয় শ্রমিক লীগের সংগঠক লুৎফুর নাহার সোনিয়া, জেলা নির্মাণ শ্রমিক লীগের সভাপতি জাবেদ আলম, মহানগর লেবার ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেন ও জেলা জাতীয় শ্রমিক জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

সারাবাংলা/আইসি/এমও

কনটেইনার ডিপো ক্ষতিপূরণ বিস্ফোরণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর