Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিজিটাল মামলার ভয়ে কেউ দাঁড়াতে সাহস পায় না: সুলতানা কামাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩ জুন ২০২৩ ২১:১৫

ঢাকা: পরিবেশবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয় রয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র সভাপতি সুলতানা কামাল।

শনিবার (৩ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত প্ল্যানার্স টাওয়ারের বিআইপি অডিটোরিয়ামে গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

সুলতানা বলেন, ‘যারা জমি দখল করে শুধু ভবন নির্মাণ করেন, তারা এদেশে বাস করেন না বলেই তারা দেশের ভালো নিয়ে ভাবেন না। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। আমরা শুধু কথা বলতে পারি, দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি। কিন্তু সেই কথা বলতে গেলেও আবার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট দিয়ে আমাদের ধরে নিয়ে যায়। তাহলে কী করে আজ যেসব কথাবার্তা হয়েছে তার সুরাহা হবে?’

আশঙ্কা প্রকাশ করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘এই নদী নিধনও হতে থাকবে, বন-জঙ্গলও উজাড় হতে থাকবে, এবং দুর্নীতিবাজরা ক্রমশও ঢাকা শহর দখল করে ঢাকা শহর যেন কোনোভাবে সাধারণ মানুষের বাসযোগ্য না থাকে, সেই পর্যায়ে নিয়ে যাবে। কারণ তারা অন্যরকমভাবে বসবাস করেন। তারা যে বলেন, বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া বানাবেন কারণ তারা বাসও করেন সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া। তারা এদেশে জমি দখল করে বিরাট বিরাট ভবন বানিয়ে নিজেরা অন্যদেশে বসবাস করেন। কাজেই, তাদের তো নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হয় না। তাদের বাচ্চাদের তো পার্কের অভাব হয় না। তাই তাদের তো এসব কষ্ট ভোগ করতে হয় না।’

তিনি বলেন, ‘ক্রমশ ক্ষয় হতে থাকা জলাশয় ও জলাভূমি রক্ষা রাজউক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সাংসদ, সিভিল সোসাইটির একার দায়িত্ব না। সবাই মিলেই কাজ করতে হবে। কিন্তু কোন কিছুর ব্যত্যয় ঘটলে কী করবেন এই প্রশ্ন যখন সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনি তখন ভয় পেয়ে যাই। সরকারের কাজই তো কী করবে তা ঠিক করা এবং সেটা নিশ্চিত করা। ব্যত্যয় ঘটালে তাদেরকে বলতে বলা হয়, কিন্তু বলতে গেলে দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। গেন্ডারিয়া পুকুর দখল ঠেকাতে পরিবেশকর্মীরা গেলে তাদের দাঁড়াতেই দেওয়া হয়নি। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর মামলা করা হয়েছে যা আজও তোলা হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

সুলতানা কামাল বলেন, ‘ডিএসএ-তে মামলার ভয়ে কেউ দাঁড়াতেই সাহস পায় না। এদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন। তিনি অসম্ভব বিনয়ী কিন্তু তিনিই যখন বক্তৃতায় বলেন, সুশীল সমাজ কিছু বলতে আসলে ধোলাইখালের পচা পানিতে ডোবাবো। কিন্তু এই পচা পানির দায়িত্ব যে তার তিনি ভুলে গেছেন।’

তিনি বলেন, ‘খুলনার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হলে কী কী ক্ষতি হবে এমন ১৩ টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম কিন্তু তা শোনা হয়নি। একটা কথাই বলা হয়, এরা উন্নয়নবিরোধী। এই যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে, এটি খুবই অমঙ্গলজনক। এরপর যখন বলেন, আপনারা এগিয়ে আসেন, তখন কেউ এগিয়ে আসবে না। একসময় দেখবেন, আপনারা একদম একা। আপনারা কিছুই করতে পারছেন না। এটি করবেন না, কারণ দেশটা আমারও। আমিও মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমরা চাই সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করতে।’

স্বাধীনতার আগে যে স্লোগান আমরা দিয়েছি, তোমার-আমার ঠিকানা আমাদের, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা। সবসময় সেভাবেই আমরা নিজেদের দেখেছি। সেই জীবনযাপন কেন বদলে যাবে। তাও কেন খারাপের দিকে বদলাবে। উন্নয়ন মানে কিন্তু শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, উন্নয়ন মানে যা প্রতিটি মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, প্রতিটি মানুষকে সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে, আরও অনেক বেশি মানুষকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে স্বাধীনতার সঙ্গে, নিঃশঙ্কচিত্তে বসবাস করতে পারবে, এটিই উন্নয়ন।’

সারাবাংলা/আরএফ/একে

ডিএসএ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সুলতানা কামাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর