আইসিটি খাতের জন্য ‘এ বাজেট হতাশার’
৪ জুন ২০২৩ ১৬:৪১
ঢাকা: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট দেশের তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের জন্য হতাশাব্যঞ্জক ও অসঙ্গতিপূর্ণ। এই বাজেট দেশের আইসিটি খাতের উদ্যোক্তাদের হতাশায় ফেলে দিয়েছে, পূরণ করতে পারেনি উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা। সফটওয়্যারসহ বাজেটে নতুন করে আরোপিত সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আইসিটি খাতের উদ্যোক্তারা। সফটওয়্যারের ওপর থেকে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার ও আইসিটি খাতের কর অব্যাহতি ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার (৪ জুন) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বেসিস মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের তথ্য প্রযুক্তিখাতের ৫ সংগঠনের নেতারা এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশেন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর যৌথ উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, আইএসপিএবি সভাপতি মো. ইমদাদুল হক ও ই-ক্যাব সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন এতে নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষে প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, ‘সরকার ঘোষিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের সুপারিশ বা প্রস্তাবের আশানুরূপ প্রতিফলন ঘটেনি। বরং স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্দেশ্যের সঙ্গে তা যথেষ্ট অসঙ্গতিপূর্ণ।’
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, ‘এবারের বাজেটটি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য আরও বেশি হতাশাব্যাঞ্জক। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা বলা হয়েছে। অথচ যখন আইসিটির বিষয়গুলো আসে তখন আমরা হতাশ হই। এই বাজেট আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আমরা সফটওয়্যারসহ এই খাতে আরোপিত ভ্যাট ও কর প্রত্যাহার চাই। সফটওয়্যারের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।’
বেসিস সভাপতি বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারের বাজেটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক বা উল্লেখযোগ্য কোনো সুখবর নেই। সুনির্দিষ্ট ও যৌক্তিক প্রস্তাব দেওয়ার পরও এ খাতের করপোরেট ট্যাক্স অব্যাহতির সময়সীমা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর, সফটওয়্যার ও আইটিইএস এর ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার, সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবা রফতানির বিপরীতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশ করা এবং সর্বোপরি দেশীয় সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশে সফটওয়্যার ক্রেতাকে বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করেছিলাম। অথচ এগুলোর কোনোটাই বিবেচনায় আনা হয়নি। অপরদিকে অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ ও সিকিউরিটি সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ৫ থেকে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং সফটওয়্যারের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ মানেই হলো, প্রতিটি খাত হবে স্মার্ট। যেখানে শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাত, কৃষি খাত, জ্বালানি খাত এভাবে সবগুলো খাতই হবে স্মার্ট। কিন্তু সফটওয়্যারের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানো এবং ভ্যাট আরোপ করায় এই সফটওয়্যারের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। যা স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।’
বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তুলনামূলক কম মূল্যে বাংলাদেশ থেকে বিপিও পরিষেবা পেয়ে থাকেন তাই বাংলাদেশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তির শিল্পের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উন্নিত হয়েছে। কনট্যাক্ট সেন্টারের অনেক সফটওয়্যার এখনো দেশে তৈরি হচ্ছে না, যা দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। কিন্তু অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ – সিকিউরিটি সফটওয়্যার এবং অন্যান্য সফটওয়্যার আমদানিতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করা হয়েছে। ফলে এই শিল্পের সেবার মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
আইএসপিএবি সভাপতি মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ কাজ করে আসছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্বেও আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সব সেবাকে আইটিইএস এর অন্তর্ভুক্তি না করা, তথ্যপ্রযুক্তিখাতে ব্যবহৃত সামগ্রীর ওপর শুল্ক না কমায় এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ১০ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার না করা, ইন্টারনেট সেবার প্রসার ও ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হবে বলে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন মনে করে।’
এমন বিপরীতমুখী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছি। একই সঙ্গে ইন্টারনেটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের জন্য আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সব সেবাকে আইটিইএস এর অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে আইএসপি সেক্টরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমরা অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি— বলেন মো. ইমদাদুল হক।
ই-ক্যাব সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন ই-কমার্স মার্কেট প্লেসকে স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই অর্জন ই-ক্যাবের গত তিন চার বছরের চেষ্টা। এবার বাজেটে মার্কেট প্লেসের যে ডেফিনেশন দেওয়া হয়েছে এটি গত তিন-চার বছরের ই-ক্যাবের চেষ্টা। শুধুমাত্র ই-ক্যাব এককভাবে এই ডেফিনেশনের জন্য গত কয়েক বছর ধরে এনবিআর এর সঙ্গে মিটিং করছিল। যখন ভ্যাটের এই ইস্যুটা ই-কমার্সের ওপর আসে তখন এনবিআরও জানত না এলে মার্কেট প্লেসের ডেফিনেশন কী। সেই ডেভিনেশন ঠিক করতে গিয়ে আমাদের তিন-চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই সংজ্ঞায়নের ফলে ডিজিটাল ব্যবসায় ভ্যাটের সুবিধা পাবে। লজিস্টিক কোম্পানিগুলো সুবিধা পাবে। সবাই একটি ক্লারিটির জায়গা থেকে দাঁড়াতে পারবে। এই খাত আরও গুছিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
বিসিএস-এর প্রতিনিধি জানান, আমরা পুরোপুরি হতাশ। বিগত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ল্যাপটপ, এফএমসি প্রিন্টার ও টোনার কার্টিজ আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করার ফলে বর্তমানে মোট শুল্কহার ২৬ শতাংশ হয়েছিল। যা এ বছর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো একই রকম আছে। একটুও পরিবর্তিত হয়নি। এতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যহত হবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে