‘তেল-কয়লা-গ্যাসের অভাব বিশ্বব্যাপী, কেনা মুশকিল’
৪ জুন ২০২৩ ২০:১০
ঢাকা: সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেল, কয়লা বা গ্যাসের অভাব সারা বিশ্বব্যাপী। এখন কেনাটাই অনেকটা মুশকিল। ক্রয় করাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরও প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে কাতার ও ওমানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়ে গেছে। জলবিদ্যুৎ আমদানিরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কয়লা কেনার জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আবার চালু করা যায়।
রোববার (৪ জুন) সংসদের বৈঠকে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কয়লা কেনার জন্য এরইমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে যেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আমরা আবার চালু করতে পারি। তবে সবাইকে অনুরোধ করব, আমরা যেন বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে পারি। তাছাড়া আমাদের খাদ্য উৎপাদনও নিজেদের বাড়াতে হবে। কারণ বিশ্বের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আর কত দিন চলবে কেউ বলতে পারে না। হয়ত বিশ্ব পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেও যেতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের রক্ষার জন্য, তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে যা যা করার আমরা করে যাচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করা হচ্ছে। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। উন্নত দেশেও বহু মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। এমন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সারা বিশ্বব্যাপী।’
তিনি বলেন, ‘জানি না আর কখনও এ রকম পরিস্থিতি হয়েছিল কিনা। হয়তো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তো দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তর দেখা দিয়েছিল।’
সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, ‘বিদ্যুৎ ব্যবহারে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। সব জিনিস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। খাদ্য উৎপাদনও বাড়াতে হবে। চেষ্টা করে যেতে হবে। বিশ্বের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আর কতদিন চলবে তা কেউ বলতে পারে না। হয়ত বিশ্ব পরিস্থতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।’ তবে দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য, তাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যা যা করণীয় তা করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগেরর নেতাকর্মী সবসময়ই দুর্গতদের সেবা করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, মানুষ মারা গেছে। তৎকালীন বিএনপি সরকার জানেইনি যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। সবার আগে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছুটে যায়। আমি নিজেও ছুটে যাই। সেই কুতুবদিয়া, মহেলখালী, বাঁশখালী- মানুষের লাশ, মহিলা ও শিশুর লাশ ভাসছে। তখন আফসারুল আমিনসহ চট্টগ্রামের নেতারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা সাধ্যমতো রিলিফ দেওয়া ও লাশ দাফনের ব্যবস্থা করি। এটা নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী (খালেদা জিয়াা) বলেছিলেন, যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরেনি। তিনি তখনও জানেননি। তার কাছে কোনো খবর ছিল না। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম কত মানুষ হলে আপনার তত মানুষ হবে।’
আফছারুল আমিনের স্মৃতি স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আফছারুল আমিন সাহেব ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্র লীগ করে এসেছেন, প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই অংশগ্রহণ করেছেন। নিবেদিত প্রাণ ছিলেন, দলের প্রতি তার নিষ্ঠা সত্যি অতুলনীয়। শুধু সংসদ সদস্য না, মন্ত্রী হিসেবেও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সেখানে তিনি অত্যন্ত সাফল্য দেখিয়েছেন। তাকে প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্ব দিলাম, বাস্তবে আজকে যে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা এতো সাফল্য অর্জন করেছে তার ভিত্তিটা কিন্তু তিনি করে দিয়ে গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আফছারুল আমিন সাহেব একজন নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগের। তার মৃত্যু আমাদের দেশের জন্য, আমাদের দলের জন্য একটর বিরাট ক্ষতি। অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। একে একে আমরা তাদেরকে হারাচ্ছি সেটা সত্যি খুব দুঃখজনক, কষ্টের। এবারের পার্লামেন্টে আমরা এত বেশি আপনজনকে হারিয়েছি, এত বেশি সংসদ সদস্য হারিয়েছি এটি আগে কখনও হয়নি।’
শোক প্রস্তাবের আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মোতাহার হোসেন, সাইফুজ্জামান, মুহিবুল হাসান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের ওয়াসিকা আয়শা খান, জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু, মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ। আলোচনার পর শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে সংসদে গৃহীত হয়।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে