পায়রার দ্বিতীয় ইউনিটও বন্ধ, ২৩ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা বাড়ল
৫ জুন ২০২৩ ১৫:২৭
ঢাকা: কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেল। এর এক সপ্তাহ আগে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এবার দেশজুড়ে তীব্র লোডশেডিং এর মধ্যেই পুরোপুরি বন্ধ করা হলো দ্বিতীয় ইউনিটও। নতুন করে কয়লার সংস্থান হলে চলতি জুন মাসের শেষ দিকে ফের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে পারে পায়রা। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী।
সোমবার (৫ জুন) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লোডশেডিং যেন মানুষের সহনীয় করা যায় সে উপায় বের করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে ২৩ জুনের পরে।
২০২০ সালের ১৫ মে থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। ওই বছরের ডিসেম্বরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম হলেও এর সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ না হওয়ায় একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ ছিলো।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদনে গেলে মোট ১৩২০ মেগাওয়াটের দুইটি ইউনিট চালাতে দরকার হয় প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। আর এই কয়লার জোগান দেয় প্রকল্প পার্টনার সিএমসি। প্রতিষ্ঠানটি প্রয়োজনীয় কয়লা কেনার জন্য ঋণও দেয়।
জানা যায়, সিএমসি প্রতি ছয় মাস পর পর টাকা আদায় করে থাকে। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। বকেয়া টাকা না দেওয়া পর্যন্ত সিএমসি নতুন করে কয়লা দেবে না বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড-বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম। তখন তিনি বলেছিলেন, যে পরিমাণ কয়লা প্ল্যান্টে আছে তাতে জুনের ৪ থেকে ৫ তারিখের বেশি উৎপাদন চালানো যাবে না।
তিনি আরও বলেছিলেন, নতুন করে কয়লা আসতে ২০/২৫ দিন লেগে যাবে। ফলে পুরো জুন মাস পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
জানা যায়, কয়লা সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট গত সপ্তাহে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মজুতকৃত কয়লা দিয়ে ৬৬০ মেগাওয়াটের অপর ইউনিটটি চলছিল।
সোমবার (৫ জুন) দুপুর পৌনে ১টার দিকে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রেজওয়ান ইকবাল খান বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী ২৫ জুন কয়লা আমদানি হলে ১ জুলাই ফের উৎপাদনে যাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র।’
এর আগে জ্বালানি সংকটে ৫ জুনের পর পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে বলে শনিবার (৩ জুন) দুপুরে জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি জানিয়েছিলেন, কয়লা আমদানি করতে আরও অন্তত ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে। সাভারের খাগান এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা ল্যাবরেটরি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী ওই তথ্য দিয়েছিলেন।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র লোডশেডিং। তারপরে প্রচণ্ড গরম। সব মিলিয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ। এই পরিস্থিতিতে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেল। রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে এর প্রভাব এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহে পড়তে শুরু করেছে। এখনি এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল এর মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পায়রা আসলে সব সমস্যার উৎস না। তবে পায়রা চলে যাওয়ায় সমস্যা একটু বাড়ল। আবার পায়রা উৎপাদনে চলে এলে সমস্যা একটু কমবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আজ বৈঠক করেছি, কীভাবে কতটুকু সেভ করা যায়। পায়রা ছাড়াও আমরা এস আলমকে আনার চেষ্টা করছি, লিকুইড ফুয়েল বাড়ানোর চেষ্টা করছি, একটু গ্যাস বাড়ানোর চেষ্টা করছি। পায়রার যে ঘাটতিটুকু এটি যেন পূরণ করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘৫ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আবার ১৩ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত আরেকটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ২২ জুন থেকে আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কারণ এরমধ্যে পায়রা উৎপাদনে যেতে পারবে। আদানির বিদ্যুৎ চলে আসবে। এস আলমের প্লান্ট থেকে ৭শ মেগাওয়াট বিদ্যুত দিতে পারবে।’
সারাবাংলা/জেআর/একে