‘দেশি-বিদেশি চাপের কাছে বাঙালি নত স্বীকার করে না’
৭ জুন ২০২৩ ১৯:০৯
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে আমরা ছিনিমিনি খেলতে দেব না। দেশি-বিদেশি যত চাপ আসুক না কেন, ওই চাপের কাছে বাঙালি নত স্বীকার করে না।
বুধবার (৭ জুন) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাতির পিতার নেতৃত্বে ৬ দফা থেকে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বাধীন করার বিভিন্ন প্রেক্ষাপটসহ তার সরকারের টানা মেয়াদে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির নানা দিক তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের ভোটের অধিকার আমরাই সুরক্ষিত করব। আমরাই এদেশে আন্দোলন সংগ্রাম করে গণতন্ত্র এনেছি। এই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই আজ বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে, আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে।’
উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনসহ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির নানা সূচক এবং ভবিষ্যতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নানামুখী পরিকল্পনার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারপ্রধান বলেন, ‘নিজেদের কাজ নিজে করতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। পরমুখাপেক্ষী হলে চলবে না। আমরা পরমুখাপেক্ষী হব না। জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যারা গণতন্ত্র হরণ করে হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে, তাদের পকেট থেকে তৈরি দলের নেতারা এখন গণতন্ত্রের কথা বলে, নির্বাচনের কথা বলে, কারচুপির কথা বলে। আরে তোরা তো ভোট ডাকাইত, তোরা তো গণতন্ত্রই জানিস না। তোরা জানিস কারফিউ গণতন্ত্র। আর তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়, এটাই বাঙালির দুভার্গ্য। যারা গণতন্ত্র আনল তাদের অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা।’
তিনি বলেন, ‘এই যে মানুষের উন্নতি হয়েছে, মানুষ কাজ পাচ্ছে, পেটে খাবার আছে, চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে, শিক্ষা নিতে পারছে- এটাই তাদের পছন্দ না। এই বাঙালির হাড্ডিসার-কঙ্কালসার দেহ দেখে বিদেশ থেকে ভিক্ষা এনে খাওয়ার অভ্যাস ছিল। ওইটাই তারা করতে চায়। জাতির পিতা বলেছেন, ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। কাজেই আমরা ভিক্ষুক জাতি হব না, বরং অন্যকে খাওয়াব।’
৬ দফা এটাই ছিল ম্যাগনাকার্টা; এটাকে ধরেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আজ সারাবিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। সেই রোল মডেল হিসেবেই আমরা এগিয়ে যাব। বাংলাদেশের জনগণকে আর কেউ বাধা দিয়ে রাখতে পারবে না। গণতান্ত্রিক ধারা যাতে অব্যাহত থাকে, জনগণের ভোটের অধিকার যাতে নিশ্চিত থাকে। ১৪ বছরে বাংলাদেশ পাল্টে গেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।’
আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকার নির্দেশ দিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা জানাতে জনগণের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের কথা বলতে হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে হবে। যাতে করে কেউ তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’
মনু মিয়ার রক্তের অক্ষরে লেখা এই ৬ দফা দিয়েই আমাদের স্বাধীনতা- এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে গিয়ে জাতির পিতা জীবন দিয়ে গেছেন। কাজেই তাদের রক্ত ঋণ আমরা শোধ করব। বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করাই আমাদের লক্ষ্য।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন- উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শাজাহান খান, সিমিন হোসেন রিমি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম