চলতি মাসেই বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর
৭ জুন ২০২৩ ২২:০২
ঢাকা: চলমান বিদ্যুৎ সংকটের প্রসঙ্গ টেনে চলতি মাসেই তা সমস্যার সমাধান হবে আশ্বস্ত করলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মানুষের কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। এরপর ১০-১৫ দিনের মধ্যে আরও বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। তখন আর কষ্ট থাকবে না।
বুধবার (৭ জুন) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর তার টানা মেয়াদে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অগ্রগতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। দুর্ভাগ্য আমাদের, করোনাভাইরাসে গেল তিনটা বছর। অর্থনীতির চাকা একেবারে স্থবির। উন্নত দেশগুলোতেও মুদ্রাস্ফীতি। পরিচালন ও পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। এরপর এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আর স্যাংশন কাউন্টার স্যাংশন। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। পণ্য পরিবহনে এই জাহাজে আসল কেন? সেটা আসতে দেবে না, ভিড়তে দেবে না। ওই জাহাজে আসল কেন? সেটা ভিড়তে দেবে না! খালি দেশের ওপর স্যাংশন নয়, জাহাজের উপরও স্যাংশন দিয়ে বসে আছে আমেরিকা। ফলে প্রতিটি দেশে আজ মুদ্রাস্ফীতি।’
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন সরকার প্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কিছু জ্ঞানী-গুনী আছেন, যারা বুদ্ধি বেচিয়া জীবিকা নির্বাহ করে, যাহা বুদ্ধিজীবী। অনেক পড়াশোনা জানে এটা ঠিক। মেলা কিতাব পড়েছে। আমি বিদ্যুৎ বানিয়ে দিয়েছি। এয়ারকন্ডিশন রুমে বসে তারা বক্তৃতা দেয়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নেয়। প্রাইভেটে টেলিভিশন আওয়ামী লীগ সরকারই দিয়েছে। সেই সুযোগ নিয়ে টকশো’তে আলোচনা করে বলে, এই বাজেট আওয়ামী লীগ কোনদিনই কার্যকর করতে পারবে না। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, কতটুকু করতে পারব- সেটা বুঝে শুনেই বাজেট দিয়েছি। আমরা যা দিয়েছি, সেটা করতে পারব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীতে তেলের দাম বেড়েছে। এলএনজি আমদানি করি, গ্যাস আমদানি করি- সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে। আমরা নিজেরা কূপ খনন করছি। নিজেরাও আমরা গ্যাস প্রোডাকশন করছি। তারপরও যখন এতগুলো মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি সেই বিদ্যুৎতের এখন অসুবিধা হচ্ছে। লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়, যেভাবে গরম পড়েছে এটা তো অস্বাভাবিক। বাংলাদেশে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা হবে এটা তো আমরা ভাবতেই পারি না। এর উপর বৃষ্টি নাই। সেখানে আরেকটা কষ্ট। এই কষ্টটা সবার হচ্ছে। আমরা সেটা জানি। তারপরও আমরা বারবার বসছি, কি করে মানুষের এই কষ্ট লাঘব করা যায়। এই কষ্ট শুধু আমাদের একার না। এটা তো বিশ্বব্যাপীই হচ্ছে। বৈশ্বিক কারণে এই কষ্টটা।
বিএনপি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্দোলন করবে, সংগ্রাম করবে আর আমাদের উৎখাত করবে। একদিকে ভালো হয়েছে; সেটা হলো- এখন যদি জ্বালাও পোড়াও করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ খুন করে আমেরিকার ভিসা পাবে না। যাদের কথায় নাচে তারাই খাবে, আমারে কিছু করা লাগবে না। ওটা নিয়ে আমাদের চিন্তার কিছু নাই। তারা কিছু লোক জোগাড় করবে বসে থাকবে। আন্দোলন করবে করতে দেবেন। আমি বলে দিছি, যত আন্দোলন করে করুক। আমরা কিছু করব না। নজর রাখতে হবে, এর আগে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, মানুষকে পুড়িয়েছে, হাত পা কেটেছে- সেটা যেন করতে না পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিজের চোখ-ক্যামেরা সবসময় ঠিক রাখতে হবে। কারণ ওদের আবার ওই দোষ আছে তো। একটা উসকানি দিয়ে সেটার ছবি উঠিয়ে বাইরের কাছে কাঁদতে থাকবে। জনগণের ক্ষমতায় তারা বিশ্বাস করে না। তারা ভাবে, অন্য কোথা থেকে কেউ এসে নাগরদোলায় চাপিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কিন্তু কেউ দেবে না, দেয় না কখনো। ব্যবহার করবে কিন্তু দেবে না ক্ষমতা। এটা হলো বাস্তব কথা। ক্ষমতা একমাত্র জনগণেই দিতে পারে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শাজাহান খান, সিমিন হোসেন রিমি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম