জুনেই শুরু হচ্ছে ভাঙ্গা থেকে রেললাইন বসানোর কাজ
৮ জুন ২০২৩ ১১:৪২
ঢাকা: পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। দক্ষিণের ২১ জেলাকে রেল পরিবহনে যুক্ত করতে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ চলমান। এরইমধ্যে রাজধানীর কমলাপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চলতি মাসেই এই পথে যাত্রী নিয়ে রেল চলাচল শুরুর কথা রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ভাঙ্গা থেকে রেললাইন বসানোর কাজও জুন থেকেই শুরু হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্রমতে, ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীন রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ লিমিটেড এই রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু করে।
জানা যায়, পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে, প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে মাওয়া ৪০ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং তৃতীয় ধাপে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ হবে। এরইমধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার পথে রেল লাইন বসানো শেষ। এই পথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরুও হয়েছে। এ ছাড়া চলতি জুনে এই পথে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহনের কথাও রয়েছে।
এদিকে ভাঙ্গা থেকে পরের অংশের কাজও আগামী ১০ জুন থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভাঙ্গা থেকে লাইন বসানোর কাজ শুরু হচ্ছে ১০ জুন থেকে। এই পর্যায়ে আমরা মধুমতি ব্রিজ পর্যন্ত মোট ৩৪ কিলোমিটারের কাজ শেষ করব। এটি শেষ না হতেই বাকি অংশের কাজ শুরু করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্প মেয়াদ। আশা করি এরমধ্যে সকল কাজ শেষ করে যশোর পর্যন্ত রেল চলাচল শুরু করা যাবে।’
ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মাসেতু, এরপর ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ লাইনের ২৩ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, মাইনর সেতু ও কালভার্ট মিলিয়ে ২৭৪টি, ৩০টি লেভেল ক্রসিং, ১৩১টি আন্ডার পাস, ৫৮টি মেজর ব্রিজসহ ২০টি আধুনিক স্টেশন করা হবে এই রেলপথে। এরমধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে হবে ৫টি স্টেশন। এরমধ্যে ভাঙ্গায় নির্মিত হচ্ছে সবচেয়ে বড় ও আধুনিক স্টেশন। এই স্টেশনটি হবে উন্নত দেশের মতো। এটির নির্মানকাজ শেষ হলে এটি হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুনিক রেল জংশন।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত মোট ২০ স্টেশনের ১৬টি নতুন করে নির্মাণ করতে হচ্ছে। আর পুরনো চারটি স্টেশনকে ঢেলে সাজানো হবে। এ ছাড়া, সেতুর দুই প্রান্তে নির্মাণ করা হচ্ছে চারটি রেলস্টেশন। প্রতিটি স্টেশনে থাকবে অফিস ভবনসহ আধুনিক সকল সুবিধা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে দেশের উড়াল ও লেভেলক্রসিংবিহীন প্রথম রেললাইন। এই রেলপথের ২৩ কিলোমিটার হবে পাথর ছাড়া উড়াল রেলপথ। ঘন্টায় ছুটবে ১২০ কিলোমিটার গতিতে। ফলে ঢাকা থেকে যশোর পৌঁছানো যাবে মাত্র দুই ঘন্টায়।
পদ্মার বুকে গড়ে তোলা সেতু দিয়ে একদিকে যানবাহন অন্যদিকে রেল চলার কথা ছিল। কিন্তু রেল সংযোগে দেরি হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রেলপথে যুক্ত হবে।
প্রকল্পটিতে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যা পদ্মাসেতুর খরচের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা। ঋন চুক্তির আওতায় চীনের এক্সিম ব্যাংক বাকি টাকা দিচ্ছে। পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কানসালটেন্ট হিসেবে এর প্রয়োজনীয় তদারকি ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সারাবাংলা/জেআর/ইআ