Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মে মাসে সড়কে ঝরেছে ৪০৮ প্রাণ: প্রতিবেদন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ জুন ২০২৩ ১৩:৩৫

ফাইল ছবি

ঢাকা: গত মে মাসে সারাদেশে ৪৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৮ জনের প্রাণহানি। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৩১ জন। নিহতদের মধ্যে নারী ৬৭ জন ও শিশু ৭৮ জন।

শুক্রবার (৯ জুন) সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

দেশের ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে ১৫৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৪১ জন, যা মোট নিহতের ৩৪.৫৫ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩১.৭৭ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০৪ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৫.৪৯ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭২ জন, অর্থাৎ ১৭.৬৪ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র:

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৪১জন (৩৪.৫৫%), বাস যাত্রী ৬জন (১.৪৭%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ট্যাঙ্কার আরোহী ৩৬জন (৮.৮২%), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স আরোহী ১৮জন (৪.৪১%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক) ৬৮জন (১৬.৬৬%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-মাহিন্দ্র-ইটভাঙ্গা মেশিন গাড়ি) ১৫জন (৩.৬৭%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান আরোহী ২০জন (৪.৯০%) নিহত হয়েছে।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬৫টি (৩৩.৬০%) জাতীয় মহাসড়কে, ২০১টি (৪০.৯৩%) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৩টি (১৪.৮৬%) গ্রামীণ সড়কে, ৪৮টি (৯.৭৭%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি (০.৮১%) সংঘটিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দুর্ঘটনার ধরন:

দুর্ঘটনাসমূহের ৭১টি (১৪.৪৬%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২৩৬টি (৪৮.০৬%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৭টি (২১.৭৯%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৫৪টি (১০.৯৯%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ২৩টি (৪.৬৮%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনসমূহ:

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক-তেলবাহী ট্যাঙ্কার ২৯.২০%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পাজেরো ৫.১২%, যাত্রীবাহী বাস ১৩.৬৭%, মোটরসাইকেল ২৩.৭৮%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-বেবিট্যাক্সি-মিশুক) ১৬.৬৬%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-করিমন-ভটভটি-চান্দের গাড়ি-টমটম-মাহিন্দ্র-ডাম্পার-লোবেট-ইটভাঙ্গার মেশিন গাড়ি-ধানমাড়াই গাড়ি) ৪.২৭%, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ৩.৮৪% এবং অজ্ঞাত গাড়ি ৩.৪১%।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা:

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৭০২ টি। (ট্রাক ১১৪, বাস ৯৬, কাভার্ডভ্যান ২৩, পিকআপ ২৭, ট্রাক্টর ৯, ট্রলি ১৩, লরি ৬, ড্রাম ট্রাক ৯, তেলবাহী ট্যাঙ্কার ৪, মাইক্রোবাস ১১, প্রাইভেটকার ১৬, অ্যাম্বুলেন্স ৭, পাজেরো ২, মোটরসাইকেল ১৬৭, থ্রি-হুইলার ১১৭ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-বেবিট্যাক্সি-মিশুক), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩০ (নসিমন-করিমন-ভটভটি-চাঁন্দের গাড়ি-টমটম-মাহিন্দ্র-ডাম্পার-লোবেট-ইটভাঙ্গা মেশিন গাড়ি-ধানমাড়াই গাড়ি), বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ২৭ এবং অজ্ঞাত গাড়ি ২৪ টি।

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ:

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৫.২৯%, সকালে ২৫.২৫%, দুপুরে ২৮.৭১%, বিকালে ১২.২১%, সন্ধ্যায় ৮.৯৬% এবং রাতে ১৯.৫৫%।

বিজ্ঞাপন

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান:

দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৭.২৯%, প্রাণহানি ২৫%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৪৬%, প্রাণহানি ১২.৯৯%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৭.৩১%, প্রাণহানি ১৭.৬৪%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.০৫%, প্রাণহানি ১৬.১৭%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৪৯%, প্রাণহানি ৪.৯০%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.২৭%, প্রাণহানি ৬.৩৭%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৯৪%, প্রাণহানি ৭.৮৪% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.১৬%, প্রাণহানি ৯.০৬% ঘটেছে।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৩৪টি দুর্ঘটনায় ১০২ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২১টি দুর্ঘটনা এবং বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ২৯টি দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম শরীয়তপুর ও রংপুর জেলায়। এই ২টি জেলায় সামান্য মাত্রার ৭ টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।

রাজধানী ঢাকায় ২৬টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছে।

নিহতদের পেশাগত পরিচয়:

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, নিহতদের মধ্যে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ১১ জন, পল্লি চিকিৎসক ৩ জন, পশু চিকিৎসক ১ জন সাংবাদিক ৪ জন, আইনজীবী ১ জন, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৩ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারি ৯ জন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১৭ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ২৩ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ৮ জন, চিনিকল শ্রমিক ১ জন, বালু শ্রমিক ২ জন, পোশাক শ্রমিক ৪ জন, নির্মাণ শ্রমিক ৩ জন, ধানকাটা শ্রমিক ৪ জন, ইটভাঙ্গা শ্রমিক ৩ জন, রিকশা মেকানিক ২ জন এবং মওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন ছাত্রীসহ সারা দেশের স্কুল-মাদরাসা-কলেজের ৫৭ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ:

১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; ২. বেপরোয়া গতি; ৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; ৪. বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; ৬. তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; ৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; ১০. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।

সুপারিশসমূহ:

১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; ২. চালকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; ৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; ৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে; ৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; ৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; ৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে; ৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; ১০. “সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮” বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

সারাবাংলা/এনইউ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর