৫০ হাজারে হরিণ ২৫ হাজার টাকায় মিলছে ময়ূর
১০ জুন ২০২৩ ১৬:৫৪
ঢাকা : জাতীয় চিড়িয়াখানায় নিয়মিতভাবে হরিণ আর ময়ূর বিক্রি করা হচ্ছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ৫ বছর ১১ মাসে হরিণ আর ময়ূর বিক্রি করে চিড়িয়াখানার আয় হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এই সময়ে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ৫৬৪টি হরিণ ও ময়ূর বিক্রি করে এই টাকা আয় করেছে। এর মধ্যে ৩৬১ টি হরিণ বিক্রি হয়ে আয় হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং ২০৩টি ময়ূর বিক্রি বাবদ আয় ৫০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
একজন সাধারণ মানুষ বনবিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিটি হরিণ বর্তমানে ৫০ হাজার টাকা কিনতে পারবেন। আগে প্রতিটি হরিণ বিক্রি হতো ৭০ হাজার টাকা। আর প্রতিটি ময়ূর বিক্রি হচ্ছে ২৫ হাজার টাকা। তবে ময়ূর কিনতে হলে বনবিভাগের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। জাতীয় চিড়িয়াখানা পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যেভাবে হরিণ কেনা যাবে : প্রতি হরিণ ৫০ হাজার টাকা ময়ূর ২৫ হাজার টাকা। গত ৫ বছর ১১ মাসে চিড়িয়াখানা থেকে ৩৬১ হরিণ বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটি হরিণের মুল্য ৫০ হাজার টাকা। এটি সরকার নির্ধারিত। হরিণ ক্রয়ের ক্ষেত্রে বনবিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে হরিণ বিক্রি করা হয়। কোনো ব্যক্তি যখন বনবিভাগ থেকে হরিণ পারিবাবিকভাবে হরিণ পরিপালন করতে পারবেন, এমন লাইসেন্স থাকা সাপেক্ষে হরিণ বিক্রি করা হয়।
যেভাবে ময়ূর কেনা যাবে : অন্যদিকে ময়ূরের ক্ষেত্রে কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই। কোনো ব্যক্তি ময়ূর কেনার জন্য অবেদন করলে তার কাছে স্টক থাকা সাপেক্ষে ময়ূর বিক্রি করা হয়। প্রতিটি ময়ূরের দাম ২৫ হাজার টাকা। এই অর্থ সরকারি কোষাগারে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমেও দেওয়া যাবে। আবার সরাসরি চিড়িয়াকানার ভেতরে ক্যাশ শাখায় টাকা জমা দিয়ে রশিদ নিয়েও হরিণ কিংবা ময়ূর কেনা যাবে।
কোন বছরে কত হরিণ বিক্রি : ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৭০ হাজার টাকা করে ৭টি হরিণ বিক্রি করে চিড়িয়াখানার আয় ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে একই দামে ৯টি হরিণ বিক্রি করা হয় ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৮ হরিণ বিক্রি হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২৫টি হরিণি বিক্রি করা হযেছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এদিকে ২০২১.২০২২ অর্থবছরে প্রতিটি হরিণের দাম ২০ হাজার টাকা কমিয়ে ৭০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫০ হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪৩টি হরিণ প্রতিটি ৫০ হাজার টাকা করে বিক্রি করে ১ কোটি ২৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা আয় করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে অর্থাৎ মে মাস পর্যন্ত ৬৯টি হরিণ বিক্রি করে সরকারের আয় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ফলে সর্বশেষ ৫ বছর ১১ মাসে ৩৬১টি হরিণ বিক্রি করে চিড়িয়াখানার আয় ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
কোন বছরে কত ময়ূর বিক্রি: ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ২৫ হাজার টাকা করে ১৭টি ময়ূর বিক্রি করে চিড়িয়াখানার আয় ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ২৩টি ময়ূর বিক্রি করা হয় ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৩টি ময়ূর বিক্রি হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মাত্র ২টি ময়ূর বিক্রি হযেছে ৫০ হাজার টাকায়।
অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১৬টি ময়ুর প্রতিটি ২৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করে ২৯ লাখ টাকা আয় করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১১ মাসে অর্থ্যৎ মে মাস পর্যন্ত ৩২টি ময়ুর বিক্রি করে সরকারের আয় ৮ লাখ টাকা। ফলে সর্বশেষ ৫ বছর ১১ মাসে ২০৩টি ময়ূর বিক্রি করে চিড়িয়াখানার আয় ৫০ লাখ টাকা।
চিড়িয়াখানায় আয় ব্যয় প্রসঙ্গে জাতীয় চিড়িয়াখানা পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘চিড়িয়াখানা লাভ করার উদ্দেশ্যে নয় মূলত দর্শকদের বিনোদনের জন্য করা। তারপরেও এখানে আয় বাড়ানোর অনেক সুযোগ এখানে রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রতি বছর সরকারের চিড়িয়াখানা গড়ে খরচ হয় ১৮ থেকে ১৯ কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় প্রতিবছর ইজারা গেইট, পার্কিং, শিশুপার্ক, জাদুঘর এবং গাছের ফলমূল বিক্রি ১৭ কোটি টাকার মতো আয় হয়। এছাড়াও প্রতি বছর হরিণ ও ময়ূর বিক্রি কিছু কিছু আয় হয়। গত অর্থবছরে এঈ খাতে প্রায় ২ কোটি টাকা আয় হযেছে। ফলে সব মিলিয়ে সরকার বছরে প্রায় ১৮ কোটি টাকা পেয়ে যায়। এছাড়াও সরকার বিভিন্ন ধরনের অর্থ থেকে ভ্যাট ট্যাক্স পেয়ে থাকে। ফলে সব মিলিয়ে সরকারের ২২/২৩ কোটি টাকা আয় হয়। ফলে চিড়িয়াখানা লোকসানি প্রতিষ্ঠান না।’
উল্লেখ্য দর্শনার্থীর বিনোদন, দুর্লভ ও বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী সংগ্রহ ও প্রজনন, শিক্ষা, গবেষণা প্রাণী বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং এ বিষয়ে সচেতনাতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৬১ সালে রাজধানীর মিরপুর ঢাকা চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৬ দশমিক ৬৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানাটি ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ১৩৩টি প্রাজাতীর প্রাণীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩৩৮টি।
সারাবাংলা/জিএস/একে