পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প: ভাঙ্গা থেকে লাইন বসানোর কাজ শুরু
১০ জুন ২০২৩ ১৯:৩২
ঢাকা: পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ভাঙ্গা অংশ থেকে যশোর পর্যন্ত রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।
শনিবার (১০ জুন) ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বামনকান্দা এলাকায় এ কাজের উদ্ধোধন করেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথের কাজ শেষ। আশা করছি আগামী সেপ্টেম্বর থেকে এ পথে রেল চলাচল শুরু করতে পারবো।’
পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চল। দক্ষিণের ২১ জেলাকে রেল পরিবহনে যুক্ত করতে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ চলমান। এরইমধ্যে রাজধানী ঢাকার কমলাপুর থেকে ভাঙা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার লাইন স্থাপন শেষ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে সূত্রমতে, ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীন রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ লিমিটেড এই রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু করে।
জানা যায়, পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে, প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে মাওয়া ৪০ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং তৃতীয় ধাপে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ হবে। এরইমধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার পথে রেল লাইন বসানো শেষ। এই পথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরুও হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে বানিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী।
ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মাসেতু, এরপর ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রডগেজ লাইনের ২৩ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, মাইনর সেতু ও কালভার্ট মিলিয়ে ২৭৪টি, ৩০টি লেভেল ক্রসিং, ১৩১টি আন্ডার পাস, ৫৮টি মেজর ব্রিজসহ ২০টি আধুনিক স্টেশন করা হবে এই রেলপথে। এরমধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে হবে ৫টি স্টেশন। এরমধ্যে ভাঙ্গায় নির্মিত হচ্ছে সবচেয়ে বড় ও আধুনিক স্টেশন। এই স্টেশনটি হবে উন্নত দেশের মতো। এটির নির্মানকাজ শেষ হলে এটি হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুনিক রেল জংশন।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত মোট ২০ স্টেশনের ১৬টি নতুন করে নির্মাণ করতে হচ্ছে। আর পুরনো চারটি স্টেশনকে ঢেলে সাজানো হবে। এ ছাড়া, সেতুর দুই প্রান্তে নির্মাণ করা হচ্ছে চারটি রেলস্টেশন। প্রতিটি স্টেশনে থাকবে অফিস ভবনসহ আধুনিক সকল সুবিধা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে দেশের উড়াল ও লেভেলক্রসিংবিহীন প্রথম রেললাইন। এই রেলপথের ২৩ কিলোমিটার হবে পাথর ছাড়া উড়াল রেলপথ। ঘন্টায় ছুটবে ১২০ কিলোমিটার গতিতে। ফলে ঢাকা থেকে যশোর পৌঁছানো যাবে মাত্র দুই ঘন্টায়।
প্রমত্তা পদ্মার বুকে গড়ে তোলা সেতু দিয়ে একদিকে যানবাহন অন্যদিকে রেল চলার কথা ছিল। কিন্তু রেল সংযোগে দেরি হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রেলপথে যুক্ত হবে।
প্রকল্পটিতে ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যা পদ্মাসেতুর খরচের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা। ঋন চুক্তির আওতায় চীনের এক্সিম ব্যাংক বাকি টাকা দিচ্ছে। পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কানসালটেন্ট হিসেবে এর প্রয়োজনীয় তদারকি ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সারাবাংলা/জেআর/ইআ