Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি, তবু চলছে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ জুন ২০২৩ ০৮:৩৯

ঢাকা: শুধু যাত্রী পরিবহনই নয়, পণ্য পরিবহনেও নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পরিবহন হিসেবে ট্রেনের তুলনা হয় না। নিরাপদ ও সাশ্রয়ে পণ্য পরিবহনের জন্যই বছর তিনেক আগে চালু করা হয়েছিলো বিশেষ ট্রেন। আমের মৌসুমে চালু করা ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ নামে এই ট্রেন সার্ভিস দিতে গিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে যে লোকসান গুনেছে তা প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি। তারওপরে ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহ তো আছেই।

ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ট্রেনে সময় বেশি লাগে। আম পচনশীল পণ্য, কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘ সময় ট্রেনে আম রাখা সম্ভব হ য়না। অন্যদিকে রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, আমের মৌসুমে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে এই ট্রেন চালু করা হয়, ফলে লাভ-ক্ষতির বিষয়টি এখানে মুখ্য নয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে চালু করা হয় ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’। ওই বছর এই মৌসুমে মোট দেড় মাস চলে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। ওই দেড় মাসে ১২ লাখ কেজি আম পরিবহন করে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৬ টাকা আয় করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর এই ট্রেন পরিচালনায় ব্যয় হয়েছিলো ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

২০২১ সালে মোট ৪৯ দিন ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চলাচল করে। ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৯২০ কেজি আম পরিবহন করে রেলওয়ের আয় হয়েছে ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৯২৮ টাকা। আর ট্রেন পরিচালনায় ব্যয় হয়েছে ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০২২ সালে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৭৮ কেজি আম পরিবহন করে আয় করেছে দুই লাখ ১২ হাজার ১৭৪ টাকা। রেলওয়ের ব্যয় হয়েছে ১২ লাখ ৪০ টাকা। সব মিলিয়ে গত তিন বছরে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন থেকে আয় হয়েছে ৪১ লাখ ৮০ হাজার ৬৩৮ টাকা আয় করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আর ব্যয় করেছে ১ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। এতে দেখা যায় গত তিন বছরে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন পরিচালনায় রেলের লোকসান ৮৫ লাখ ৩৯ হাজার ৩৬২ টাকা।

এবারও চতুর্থ বারের মতো চালু করা হয়েছে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’। গত বৃহস্পতিবার (৮ জুন) ঘটা করে এর উদ্বোধন করেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। রহনপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী হয়ে আম নিয়ে শুক্রবার (৯ জুন) ঢাকায় পৌঁছায় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন।

গত বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রহনপুর থেকে ট্রেনটি বিকেল ৪টায় ছেড়ে গেলেও ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছেছে শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টায়। ২৪ ঘণ্টা পর গন্তব্যে পৌঁছানোয় অনেক আম পঁচে গেছে বলে জানা গেছে।

রাজশাহীর আম ব্যবসায়ী বুলবুল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আম এমন ফল, যা দ্রুত নস্ট হয়ে যায়। ট্রেনে ভাড়া কম, নিরাপদ ঠিকাছে কিন্তু রেফ্রিজারেটর নেই এবং সময় লাগে অনেক। যে কারণে ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। ফলে আমরা ট্রাকে করে পাঠানোর চেষ্টা করি। সেখানে খরচ বেশি হলেও অর্ধেক সময়ে পৌঁছে যায়।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে প্রতি বছরই রেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়। শুরুর দিকে আম পাঠানো শুরু করে অনেকে। কিন্তু লোকসানের কারণে ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।’

তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, রেলে রেফ্রিজারেটারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রেফ্রিজারেটরযুক্ত পণ্যবাহী ওয়াগন এরই মধ্যে কেনা হয়েছে। যদিও তা এখনও পৌঁছায়নি। যা ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজে ব্যবহার করা হবে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘সহজ, সাশ্রয় ও নিরাপদ পণ্য পরিবহনের উদ্দেশ্যেই এই সার্ভিস চালু করা হয়েছে। রেলওয়ে আমের মৌসুমে ব্যবসায়ীদের সেবা দিচ্ছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এ সমস্যা থাকবে না।’

সারাবাংলা/জেআর/এমও

আম ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর