ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। কারও কাছে মাথা নত করে চলি না। মাথা উঁচু করে চলি, মাথা উঁচু করে চলব। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। কাজেই বিশ্বকে আমরাও পথ দেখাতে পারি। আমাদের মেধাবী ছেলে-মেয়েরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
রোববার (১১ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শাপলা হলে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩ এর সেরা মেধাবী পুরস্কার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড-২০২২ প্রদান করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষাই হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড। জাতির পিতা বলেছিলেন, শিক্ষায় যত অর্থই ব্যয় হোক, এটা হচ্ছে বিনিয়োগ। শিক্ষিত জাতি ছাড়া দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব না। তার জন্য আমাদের সব উদ্যোগ শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়ে যাচ্ছি।
কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষা ক্ষেত্রে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রাপ্ত মেধাবীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১’র বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে, অর্থাৎ স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট সোসাইটি। আজকের ছেলে-মেয়েরাই ভবিষ্যৎ এবং ২০৪১’এ তারাই আমার মতো প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা বড় বড় উচ্চপর্যায়ে যাবে, দেশ চালাবে। এখানেই থেমে গেলে চলবে না। আরও কর্মসূচি তৈরি করে রেখে যাচ্ছি, সেটা হচ্ছে ডেলটা প্ল্যান।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, কেউ কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না- এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’
কবি সুকান্তের ভাষায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি— নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
শিক্ষার্থীদের কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবসময় মাথায় রাখতে হবে, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। কারও কাছে মাথা নত করে আমরা চলি না। মাথা উঁচু করে চলি, মাথা উঁচু করে চলব। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। কাজেই বিশ্বকে আমরাও পথ দেখাতে পারি। আমাদের মেধাবী ছেলে-মেয়েরা এভাবেই এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রথমে সরকারে এসে দেখি এখানে গবেষণার জন্য কোনো ফান্ড নেই। কোনো টাকা নেই, গবেষণার দিকে কারও দৃষ্টি নেই। এমনকি বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া যায় না, এমন একটা অবস্থা ছিল। আমাদের অগ্রাধিকার ছিল কৃষি ও খাদ্য নিশ্চিত করা। কৃষি গবেষণায় আমরা সফল হলাম। তিন চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সক্ষম হলাম। বাংলাদেশের গবেষকরা সব উৎপাদন করতে পারে। আমাদের ছেলে-মেয়েদের যে মেধা, সেই মেধা বিকাশের সুযোগ দিলে এই দেশ আর কখনো পেছাবে না, এগিয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি আজ আশাবাদী এদেশকে আর কেউ পেছনে টেনে নিয়ে যেতে পারবে না। আবার অন্ধকার যুগে নিয়ে যেতে পারবে না। গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত আছে বলেই এদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।’
এর আগে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। মাধ্যমিক থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফির জি টু পি পদ্ধতিতে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হলো। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৫২ লাখ ১৪ হাজার ৬৫০ জন শিক্ষার্থীকে ১ হাজার ১২০ কোটি ৪৫ লাখ ৯ হাজার ৫৬০ টাকা অনলাইন মাধ্যমে অভিভাবকদের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়েছে৷ স্নাতক পর্যায়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮৯ জন শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়েছে ৭৯ কোটি ৪৭ লাখ ৬১ হাজার ৫৬০ টাকা।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ-২০২৩ জাতীয় পর্যায়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সেরা ১৫ জন শিক্ষার্থীর হাতে পদক তুলে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২২ পেয়েছেন ২২ জন কৃতি শিক্ষার্থী।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।