Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩২ বছরে চট্টগ্রামে ১৮ বর্গকিলোমিটার পাহাড় ধ্বংস: বেলা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ জুন ২০২৩ ১৯:৫৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ৩২ বছরে চট্টগ্রামে প্রায় ১৮ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কেটে ধ্বংস করা হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা)। অবশিষ্ট পাহাড় রক্ষায় দ্রুততার সাথে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

রোববার (১১ জুন) চট্টগ্রাম মহানগরের পাহাড় কাটা রোধে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ বিষয়ে তথ্যউপাত্ত তুলে ধরেন বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

নগরীর স্টেশন রোডে মোটেল সৈকতের সাঙ্গু হলে অনুষ্ঠিত এ সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা ছিলেন।

সভায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামে ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার পাহাড় ছিল। ২০০৮ সালে সেটা ১৪ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটারে নেমে আসে। চট্টগ্রাম নগরীতে যত পাহাড় কাটা হয়েছে, তার ৭৪ শতাংশই শুধু পাঁচলাইশ মৌজায় কাটা হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড় কাটা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলায়ও।

তিনি বলেন, ‘১৯৮৩ সালে সরকারি আদেশ ছিল, চট্টগ্রামের কোথাও কোনো পাহাড় কাটা যাবে না। ২০০৭ সালে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল-জাতীয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া পাহাড় কাটা যাবে না। উচ্চ আদালত ২০১২ সালের ১৯ মার্চ আদেশ জারি করেছিলেন- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটিতে কোনো পাহাড় কাটা যাবে না। কিন্তু সরকারের জারি করা আদেশ এবং উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করেই এই অঞ্চলে পাহাড় কাটা হয়েছে। উচ্ছেদ করা পাহাড়ে আবার গাছ লাগানোর কথাও বলা হয়েছে। পাহাড় কেটে কীভাবে জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে সেটি আমাদের মাথায় ধরে না।’

বিজ্ঞাপন

সভায় কয়েকজন বক্তা পাহাড় কাটার জন্য চসিকের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। এছাড়া পাহাড় কাটা রোধে ২০০৭ সালের উচ্চপর্যায়ের কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন, পাহাড়গুলোর বর্তমান অবস্থা জানতে জরিপ করা, পাহাড় কাটা রোধে একটি হটলাইন চালু করা, আর কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে পাহাড় না কাটা, পাহাড় কেটে বাড়ি বা স্থাপনার কোনো পরিকল্পনায় সিডিএ অনুমোদন দেবে না মর্মে পত্রিকায় নোটিশ দেওয়া, পাহাড় সুরক্ষায় সমন্বয় সেল বা আলাদা ইনফোর্সমেন্ট সেল বা টিম গঠন এবং পাহাড়ে বিদ্যুৎ, পানিসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা বন্ধ করার সুপারিশ করেন বক্তারা।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র রেজাউল করিম বলেন, ‘বাস্তবে পাহাড় নিয়ে স্বাধীনতার কোনো জরিপ হয়নি। চট্টগ্রামে বালির পাহাড়, একটু গর্ত করে দিলেই সেটা ধ্সে পড়ে। পাহাড়কে হত্যা করছে দখলদাররা। ৫০ হাজার, এক লক্ষ টাকা জরিমানা তাদের জন্য নয়। পাহাড় যারা কাটে, তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখতে হবে। অনেক সময় ভূয়া দলিল করে সিডিএ থেকে নকশা অনুমোদন করে নেয়া হচ্ছে। সরেজমিন তদন্ত করে সিডিএকে প্ল্যান দিতে হবে।’

মেয়র আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে লিংক রোড পাহাড় না কেটেও করা যেত। ব্যক্তির উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে গিয়ে আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি। আজ থেকে আর একটি পাহাড়ও কাটতে দেয়া যাবে না। যারাই পাহাড় কাটবে, সম্মিলিতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্মিলিত সমন্বয় করা হবে। পরিবেশ রক্ষায় একটি হটলাইন প্রতিষ্ঠা ও এর জন্য আলাদা এনফোর্সমেন্ট টিম থাকার দাবি যৌক্তিক। ট্রিপল নাইনের মতো পরিবেশ সুরক্ষায় যেন সবাই সাথে সাথে তথ্য দিয়ে ফল পায়, সেটা আমাদের করতে হবে। দ্রুততার সাথেই আমরা চট্টগ্রামে একটি কমিটি করব, যাতে আর একটি পাহাড়েও কোপ না পড়ে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ভূয়া দলিলে সিডিএ থেকে নকশা নেওয়া বন্ধে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন।

সভায় পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, ‘আমরা গত কয়েক বছরে ৮৫টি মামলা করেছি। ২০২২ সালেই শুধুমাত্র মামলা হয়েছে ২২টি। আমরা যে আইনের ভেতরে আছি, তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সিটি করপোরেশন, সিডিএ এবং জেলা প্রশাসনসহ যেসব সরকারি দফতর আছে, অনেকসময় আমরা সেই জায়গা থেকে কাঙ্খিত সহযোগিতা পাচ্ছি না। এজন্য আমরা সফল হচ্ছি না। সিডিএ যদি নকশা অনুমোদন না দেয়, তাহলে বড় পদক্ষেপ হবে।’

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সিকান্দার খান, এএলআর ডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বক্তব্য রাখেন।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর