ফোনালাপ ফাঁসের মামলায় আমীর খসরুর বিচার শুরু
১২ জুন ২০২৩ ১৩:৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় ফাঁস হওয়া টেলি কথোপকথনের ভিত্তিতে দায়ের হওয়া মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় সাবেক এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধেও অভিযোগ গঠন হয়েছে।
সোমবার (১২ জুন) চট্টগ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম এ আদেশ দিয়েছেন। এ সময় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অভিযুক্ত দু’জন উপস্থিত ছিলেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মফিজুল হক ভূঁইয়া সারাবাংলাকে জানান, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩) ধারায় দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে আদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় পরে নির্ধারণ করা হবে বলে আদালত জানিয়েছেন। জামিনে থাকা দুই আসামি আদালতে হাজির ছিলেন।
বিএনপির শীর্ষ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে এ মামলায় আসামি হিসেবে আছেন কুমিল্লার সাবেক ছাত্রদল নেতা ব্যারিস্টার মিলহানুর রহমান নাওমী।
আইনজীবী মফিজুল হক আরও জানান, মামলার বিচার কার্যক্রম চলাকালে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দেয়ার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ ধারায় আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে মামলার বিচার কার্যক্রমে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে সশরীরে হাজির থাকতে হবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কাছে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজিব নিহত হয়। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের মধ্যে আমীর খসরুর মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে কুমিল্লায় অবস্থানরত তৎকালীন ছাত্রদল নেতা মিলহানুর রহমান নাওমীর টেলিফোনে একটি কথোপকথন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে আমীর খসরুর হুবহু কন্ঠস্বরে ওই ছাত্রদল নেতাকে ঢাকায় এসে তার লোকজন নিয়ে নেমে পড়ার জন্য বলতে শোনা যায়।
ওই বছরের ৪ আগস্ট বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। মামলায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত ও ষড়যন্ত্রের চেষ্টার অভিযোগ এনে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। মামলায় জাকারিয়া দস্তগীর দাবি করেন, আমীর খসরুর উসকানির জেরে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তার কথার জেরেই ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা হয়।
ওই মামলায় ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর উচ্চ আদালতের অর্ন্তবর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। একমাসের বেশি সময় তিনি কারাগারে ছিলেন। এ ছাড়া পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় আদালতের নির্দেশে মিলহানুর রহমান নাওমীকেও আসামি করা হয়, যদিও মামলার এজাহারে তার নাম ছিল না। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের একটি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া ওই মামলা তদন্ত করে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সঞ্জয় গুহ। অভিযোগপত্রে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে ‘তথ্যগত ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে টেলিফোনে কথোপকথনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দাখিল করা এই অভিযোগপত্রে।
একই ঘটনায় একই সময়ে দু’জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ থানায়ও একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলাও অভিযোগপত্র দাখিলের পর বিচারের পর্যায়ে আছে।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ